My Readers

Saturday, October 6, 2012

Durga Puja and a Child Me


কাজ করতে করতে কড় গুণে দেখি, ওম্মা আর মাত্র ১৪ দিন! মনিটর চলছে, কিন্তু তা পাল্লা দিতে পারছে না আমার মাথার ভিতরে অন হয়ে যাওয়া আর এক মনিটরের সঙ্গে। সেখানে কুমোর  পাড়া, আমার পাড়া, রাস্তার ধারের শিউলি ফুলের গাছ, কচি বাঁশের সুবাস, দু  র্গার চুলের গন্ধ, তার তুলিটানা শাড়ির গন্ধ, ধূপধুনো, ঘুমন্ত ঢাকির পাশে ঢাকের গড়িয়ে যাওয়ার টুংটাং, ...আমাদের  পাড়ার নামটি খুব চমৎকার। বালুবাড়ি। শুনেছি, ঘর্ঘরা নদীর পাড়ে ছিল আমাদের পাড়া। বালু ছাড়ানো পাড়া তাই বালুবাড়ি। কিন্তু সে কবেকার গল্প কে জানে। আমি তো ছোটবালায় সেই নদীতে শূয়োরদের গায়ে কাদা মাখতে দেখেছি। চারপাশে জঙ্গল, বালুর নামমাত্র ছিল না কিছু। সে যাই হোক, ওই নাম যেন আমার গায়ের চামড়া ভেদ করে আমার রক্ত মাংসে  সেঁধিয়ে গেছে। নামের এমন  মাহাত্ম সাত প্রহর কীর্তন করেও কেউ অর্জন করতে পারবে না।

আমাদের পাড়ার পুজো বসত দিলুদের মাঠে। দiলুর বাবা ছিলেন মোক্তার, সেজন্যে নয়। আসলে আমাদের পাড়ায় পুজো করার মতো আর কোন যুৎসই ফাঁকা জায়গা ছিল না।  তো দিলুদের পরিবারের রমরমা ছিল বেশি। আমার বাবা নাস্তিক, তাই আমাদের চলনে বলনে একটু ব্রাত্য ভাব ছিলই। বাবার সামাজিক সম্মান  এই সময়ে আমাদের গর্বিত  করতে পারত না। আমাদের বাবাকে প্রায়ই পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে  জেলে নিয়ে যেত । বাবা স্বদেশী ছিলেন, সঙ্গে  মা। কত পুজো যে বাবাকে ছেড়ে কাটিয়েছি  ঠিক  নেই । মা আমার জন্মের আগেই সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে কৃষক সমিতিতে যুক্ত হয়েছিলেন। তাই আমাদের পরিবারের আর্থিক  অবস্থা ভালো ছিল না।
দিলুরা  কালো  শু পরত, আমরা কেডস। দিলুরা ইংলিশ প্যান্ট পরত, আমরা ফিতে বাঁধা ইজের। দিলুরা ষষ্টির দিন নতুন জামাকাপড় পরে ঘুরে বেড়াত, আমরা একদিন বাদে, সপ্তমীতে।

মেজদা খুব লেকচার দিত। ও ছাত্র রাজনীতি করত স্কুলে। আমার মাথায় ঢুকত না কিছুই। দিলুকে দেখলে আমার হিংসে হত, হিংসে হত। দিলু এখন জলপাইগুড়িতে থাকে। রিটায়ার্ড। পড়ছিস নাকি রে? সত্যি বলছি এ কথা।

পুজোর আগে আমাদের পয়সা জমাতে  হত, নানা কায়িক পরিশ্রম করে। হাট করা বাজার করা ছিল সবচেয়ে বড় সোর্স। রিক্সা ভাড়া লাগত চার আনা, আমরা কাঁধে করে, পিঠ বাঁকিয়ে সে সব আনতাম, মা রিক্শার  পয়সাটা আমাদের দিতেন। বাজার করার জন্য বকশিসও ।  আমার  ওপরের ভাই, এখন শিলিগুড়ির চোখের নামী ডাক্তার, ছিল আমার থেকে চালাক। ও  বাজারের দায়িত্ব নিত বেশি। হাটের না।  বাজার করা হাল্কা কাজ, অল্প পয়সা হলেও । কিন্তু বেশি দিন  বাজারে যেতে হত ।  আমি হাটে যেতাম। চার আনা মানে, রাজ্য কেনা যায়।

আমরা বাঁশের খুটিতে পয়সা জমাতাম। বাঁশের দুই গাঁটের মাঝখানে পয়সা ফেলার সরু গর্ত কেটে পয়সা ফেলতাম। পুজোর   আগে খুঁটি  চিরে  পয়সা বের করা হত। একবছর, আমার অনেক পয়সা জমেছিল। সবার থেকে বেশি। আমি বাঁশ চিরে, গুনে,  টেবিলের ওপর সব রেখে ব্যাগ এনে ফিরে দেখি, হাওয়া । একটা  পয়সাও নেই। কান্নাকাটি। মেজদার হুঙ্কার! 'পরিবারের নাক কাটা গেল!' রেগে  আগুন। শেষটায়   দেখা গেল একই জায়গায় পয়সাগুলো উড়ে এসে বসে আছে। সবাই বুঝলাম কার কাজ। আমাদের ছোট ভাইয়ের। এই প্রথায় পয়সা জমাবার বয়স তার হয়নি, তাই। মেজদার সন্দেহ। এখন সেই ভাই একটা টিভি  চ্যানেলের সি ইও।

1 comment:

Jaya Kundu said...

বেশ লাগল