My Readers

Sunday, April 21, 2013

অভাব বোধই মানুষকে এগিয়ে দিয়েছে


নৃতত্ত্বের সংজ্ঞায় একমাত্র অভাব বোধই মানুষকে নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে দিয়েছে। সমাজের অভাব-বোধের মাত্রা থেকেই মানুষের সামাজিক গোষ্ঠির অগ্রগতি অনুমান করা যায়। অতীতে আদিবাসীদের আমরা অধিকতর সুখী দেখেছি, কেননা তাদের দৈনন্দীন জীবনে শুরুতে কোন অভাব ছিল না। আন্দামানে জারোয়াদের অভাব নেই বলেই তারা হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের চোখে অসুখী হলেও নিজেদের ঘেরাটোপে পরম তৃপ্তিতে জীবন যাপন করে। বিশ্বের সর্বত্রই, ‘অসভ্যথেকে মানুষেরসভ্যহয়ে ওঠার মুলে এই নৃতাত্ত্বিক প্রকরণ।

এটা সত্য এই সময়ের বাঙালি, আমরা, পরিবর্তনমুখী নই, বা আরো পরিষ্কার করে, আমরা অগ্রগতিতে আগ্রহী নই। শহুরে মুষ্টিমেয় কথা বাদ দিন। বাংলার অধিকাংশ মানুষ কি বাংলায় শিল্পায়নের অভাব বোধ করেন? বেশির ভাগ মানুষ কি বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অভাব বোধ করেন? রাজনীতিতে? শিক্ষা-দীক্ষায়? ধর্মচেতনায়?... আবার বলি মুষ্টিমেয়কে গুণবেন না। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরেই খুঁজে পাব আমাদের অগ্রগতি অথবা স্থবিরতার মুখ্য কারণ। আমার ব্যক্তিগত মত। এখানে নিয়ে বিতর্ক করা যায় না?

কে দেবে পরিবর্তনের স্বাদ?

ধর্ষণ নিয়ে এত হৈ চৈ আগে ছিল না। কিন্তু তা বলে কি আগে আমাদের সমাজে ধর্ষণ হত না বা কম হত বা কম রিপোর্টেড হত? বোধ হয় না। আমরা ইদানীং ধর্ষণ মাত্রেই বিচলিত হয়ে পড়ছি অন্য কারণে, ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকদের নির্মম ও পাশবিক মানসিক বিকারের প্রমাণ পেয়ে। কেনো এই অবস্থা সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। 

মনে হয় না, সারাজীবনের কারাবাস বা ফাঁসীর মতো কঠোর আইন প্রণয়ণে আমরা ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা কমাতে পারব বা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা পাশবিক মানসিকতার নির্মমতাকে স্তিমিত করতে পারব। এটা তো ঠিক, নির্ভয় আইনের তোড়জোড়ের পরেই দিল্লিতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে, সেই সঙ্গে নির্মম পাশবিকতার মাত্রাও। কেনো? শুধুই কি পুলিশী তৎপরতার অভাবে? পুলিশ যদি পাঁচ বছরের ধর্ষিতা শিশু কন্যার বাবা-মায়েদের কথা মতো তৎক্ষণাৎ ডায়েরি করতেন বা অকুস্থলে ছুটে যেতেন, তবে কি ওই ঘটনার কোন হেরফের ঘটত? অবশ্যই না। 

ধর্ষণ কোন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ নয় যে দীর্ঘসময় ধরে তার ছক কষা হবে, এবং পুলিশের চরেরা তার আগাম হদিশ জোগাড় করবে। এটা একটা বিকৃত যৌন ক্রিয়া, তাৎক্ষণিক। সমাজ এক্ষেত্রে পাহারাদার হতে পারে না, তা সম্ভবও না। একমাত্র একজন ধর্ষকই আপন চেতনায় নিজের ওপর পাহারাদারের কাজ করতে পারে, সাম্প্রতিক কালের বিকৃত ঘটনাগুলোর আগে সংঘটিত অধিকাংশ ঘটনাতেই এই আপন-পাহারাদারিত্ব দেখা গেছে। এখন ধর্ষক চরিত্রেরও বদল ঘটেছে। কে এই নতুন ধর্ষক? বা আরো বিশদভাবে বলতে গেলে, কোথায় এই পশুর বাস? উত্তর একটাই, আমাদের মধ্যেই তাদের বাস, খোলসা করে বলতে, আমরা সবাই তার সহবাসী। তাইই যদি হয়, এই যে একের পর এক পাশবিক ধর্ষণের ঘটনা, তাতে আমাদের দায় কি কম? আমরা কি পরোক্ষে এজন্য দোষী বা দায়ী নই? 

লক্ষ করুন, সম্প্রতি আমরা ধর্ষকদের আইনের ভয় দেখিয়ে শুধরাবার চেষ্টা চালাচ্ছি, তাদের চেতনাকে আগাম শুধরাবার চেষ্টা তাতে নিহিত নয়। এই সময় আমাদের নতজানু হওয়ার কথা দেশের তাবড় তাবড় সমাজ বিজ্ঞানীদের সামনে। কিন্তু কোথায় তাঁরা? উকিল মোক্তারদের দিয়ে কি এই কাজ হয়? নাকি স্লোগান আর মোমবাতি জ্বেলে? পুলিশকে ট্রান্সফার করে কি এই কাজ হয় নাকি, প্রধানমন্ত্রীর চোখের জলে? নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক সমাজ প্রক্রিয়ায় গড়ে উঠেছে ছয় দশকের স্বাধীনতা পরবর্তী এই ধর্ষণ প্রবণ সমাজ, এই সমাজের চেতন। ভারতের এমন বস্তাপচা সমাজ-চেতনার পরিবর্তন দরকার। কিন্তু কে দেবে সেই পরিবর্তনের স্বাদ?

Saturday, April 20, 2013

গণতন্ত্র একটি শাসন ব্যবস্থা মাত্র, কোন সমাজব্যবস্থা নয়,


গণতন্ত্র একটি শাসন ব্যবস্থা মাত্র। গণতন্ত্র কোন সমাজব্যবস্থা নয়, এইটে মনে রাখা দরকার। তাই গনতন্ত্র একটি সমাজকে কতটা সাফল্য এনে দিতে পেরেছে, আমার সন্দেহ আছে।

কোন সমাজেরই ছকে বাঁধা কোন তন্ত্র থাকে না। পৃথিবীর সব সমাজই এক একটি একক বিন্যাস। সেই বিন্যাসও মুলত একটিমাত্র অভিঘাতকে ঘিরে, সেটা সেই সমাজের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির গুণমানই সেই সমাজের গুণমান নির্ধারক। তাই গণতন্ত্রের সফল বা ব্যর্থ প্রয়োগের সঙ্গে সমাজের গুণমানের কোন হেরফের আমরা দেখতে পাই না। নানা সমাজের ভিন্নতা ঠাহর করতে হয় একমাত্র তাদের সাংস্কৃতিক অবস্থানের নিরিখেই।

এ তো সত্যি, সমাজের সাংস্কৃতিক বহমানতাই সেই সমাজের প্রাণবন্তার হদিশ দেয়। সমাজ নিজে থেকে এই বহমানতা সৃষ্টিও করতে পারেমা, রক্ষাও করতে পারে না। গোষ্ঠীবদ্ধভাবেই হোক বা একক ভাবে, সমাজের সাংস্কৃতিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে হলে চাই, সেই শ্রীবৃদ্ধিতে সমাজবদ্ধ সব মানুষের কম-বেশি অবদান। এর বিকল্প কোন উপায় তো দেখি না। আমি মনে করি, ব্যক্তির (ও গোষ্ঠীর) অবদানই সমাজের মূল গতিপথ ঠিক করে। এই সব অবদানই সমাজকে সামনের দিকে সচল রাখে। আমরা সবাই লক্ষ্য করেছি, সমাজের যে-কোন শাখা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অবদানে যত বেশি সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত, সেই সমাজের অগ্রগতিও ততই আকাশ ছোঁয়া, আর যে-সমাজে তা কম, সে সমাজ চিহ্নিত হয় তত অনগ্রসর হিসেবে। সমাজে এই অবদানের ধারা যদি কোণ কারণে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়, মানতে হবে সে সমাজ তখন স্থবিরত্ব বরণ করেছে।

এই পটভূমিতে আমাদের বাংলার বর্তমান অবস্থানটাকে বিশ্লেষণ করতে চাই।

সমাজই ইতিহাস গড়ে, ইতিহাস তো সমাজ তৈরি করে না। এটা মেনে নিলে দেখব, বাংলার বর্তমান সমাজে ঘটছে ঠিক এর উল্টোটি। আজ নয়, গত কয়েক দশক ধরেই। আমরা বর্তমানকে ছেড়ে অতীত ইতিহাসকে কেন্দ্র করেই আমাদের সাংস্কৃতিক বহমানতাকে সচল রাখতে সচেষ্ট রয়েছি, নিজেদের গৌরবোজ্জল করাকে একমাত্র উপায় মনে করেছি। আমরা আমাদের বর্তমানের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অবদানে আমাদের সমাজকে সমৃদ্ধ করতে চাই নি চাইছিও না। ফলে আমরা ক্রমশ সরে সরে যাচ্ছি স্থবিরতার দিকে। গেছিও।

গণতন্ত্রের একটা বড় সমস্যা হল, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অচিরেই তার অপব্যবহারে শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করে ফেলে। সেই শক্তি রাজনৈতিক হতে পারে, অর্থনৈতিক হতে পারে, এমনকি বাহু শক্তিও হতে পারে। শুধু যা হয় না, তা হল, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কখনই সাংস্কৃতিক শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করে না, শক্তিশালী করে না। কেন না, তা করা যায় না বলেই। কোন শক্তির ব্যবহারে বা অপব্যবহারেই সাংস্কৃতিক শক্তিকে কেন্দ্রীভুত করা যায় না। সাংস্কৃতিক শক্তির ধর্ম বিস্তার, কেন্দ্রীভূত হওয়া নয়।

গণতন্ত্রে শক্তির এই ভয়াবহ অপব্যবহার আমরা বাম জমানার কয়েক দশকে যে ধীর গতিতে সংঘটিত হতে দেখেছি, বর্তমানের তিন আনা দশকেই তা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চিট ফান্ডের দৌরাত্মই বলো বা পাশবিক ধর্ষণকান্ড বা পাশাপাশি পুলিশী নিষ্কৃয়তা বা অতি সক্রিয়তা, কলেজে, কারখানায়, অফিসে, হাসপাতালে, রাস্তাঘাটে যে শক্তি-উন্মত্ত পাশবিক উল্লাস আমরা অহরহ দেখছি, সবই জানবে, গণতান্ত্রিক-রক্ষাকবজের জোরে কেন্দ্রীভূত শক্তির অপব্যবহারের নামান্তর মাত্র।

Saturday, April 6, 2013

আমার কবিতা


21 August, 2013


// ধুলো //

তুমি  ধুলো
পায়ের নিচে চেপ্টে থাকো
দামাল হাওয়ায় জেগে ওঠো
বদলে যাও ঝড়ে

আর উড়ে গিয়ে পড়ো তাদের চোখে যারা
তোমার বুকে পা রেখে হাঁটে।
এমন কোন জায়গা নেই যেখানে
তোমার যাওয়া নেই।
এমন কেউ নেই যে তোমাকে রুখতে পারে

তুমি  ধুলো
পায়ের নিচে দাবিয়ে
ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে হাঁটার জন্য

(হিন্দি কবি সর্বেশ্বর দয়াল সাক্সেনা-  কবিতা।  অনুবাদ আমার।


//ক্ষুধা//

যখনই
কেউ দাঁড়িয়ে যায়
ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলে
সুন্দর লাগে তাকে দেখতে

শাঁ করে নেমে আসা বাজপাখি,
ফণা তুলে উঠে দাঁড়ানো সাপ
ছাগলের টালমাটাল দুপায়ে
কাঁটা বাঁচিয়ে কচিপাতায় কুটকুট
ঝোপের পিছ নেচিতার চুপিচুপি পা-ফেলা
ডাল থেকে উলটো ঝুলে টিয়ার
ফল ঠোকরানো
কিংবা এদের জায়গায় কোন মানুষ

যখনই
কেউ দাঁড়িয়ে যায়
ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলে
সুন্দর লাগে তাকে দেখতে।

(হিন্দি কবি সর্বেশ্বর দয়াল সাক্সেনা- কবিতা। অনুবাদ আমার।


// অর্ঘ //

ফ্রিজের থেকে ঠান্ডা জল খাও
ঘিয়ে চোবানো রুটি খাও
শুভ্র বিছানায় শুয়ে পড়ো
টিভি চালিয়ে মজা করো।
আল্লা, একদিন আমার বাড়িতে এসো
এসো লুকিয়ে থাকো
আমার বাড়িতে একটি দিন।


উর্দু কবি মহম্মদ আলভির কবিতা। অনুবাদ আমার।


// ফিলিস্তিন //

সংস্কৃতির শত্রুদের আমরা চুরমার করে দিয়েছি
আমরা পেরেছি,
এবার ওদের কাজ করব আমরা
ওদের থেকে আরো ভালো করে

-----------------------------
মলয়ালাম কবি কে. আয়াপ্পান পানিকার’র কবিতা। অনুবাদ আমার।




// কবি //

নৈঃশব্দ্যে চমকে জেগে উঠে
রাতটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে
দেখে শুধু
শেষ ভক্তটিও ছেড়ে গেছে তাকে
চলে গেছে।

কেঁপে ওঠে
শুনতে পায়, সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় পিছুপিছু
মহিলার গোঙানি
কাঁদছে, ঘুমের মধ্যেই।

আর যখন ছুটতে পারেনা
নিজেই কেঁদে ফেলে। যখন আর কাঁদতেও
পারেনা বসে পড়ে
ল্যাম্পপোস্টের নিচে
কবিতা লিখবে বলে।

কন্নড়কবিআর. সি. রামচন্দ্রশর্মারকবিতা।অনুবাদআমার।





// একটি ঘটনা //


আমার মৃত্যুটা অনেকদিনের কথা
অনেক সময় ঘুম ভাঙেআর ভাবি
আমার চলে যাওয়া উচিত, ছাই ছড়িয়ে দেওয়াও দরকার
আমার মরদেহের কাছে অন্তত এইটুকু তো ঋণী আমি। 

সব ঘটনার ব্যাখ্যা করতে পারি, শুধু এইটা না
একটা মরা আর একটা মরার জন্য কাঁদে--
মরার গর্ভ কখনই বন্ধ্যা না।

এমন কি, মরার গর্ভও অসহায়
মা-প্রেম গর্ভেরও এই অসহায়তা।
মরার কাছে আমার যে ঋণ, তা তো শোধ করতে পারি
কিন্তু গর্ভের কাছে আমার যে ঋণ, তা শোধ করবে কে?

কখনো সখনো, উঠে বসি আর ভাবি
গর্ভের সব হিসেব-নিকেশ ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেলব
সইটা লুকিয়ে রাখব
আর আমি ঋণী সে কথাটাই স্বীকার করব না।

উঠে বসি, পা-টা এগিয়ে দিই চৌকাঠে
কিন্তু গর্ভের কাছ থেকে এই পালিয়ে যাওয়া গর্ভকে কাঁদায়
এক ফোঁটা দুধ টপ করে ঝরে পড়ে
আমার মরার বুক থেকে।

বাড়িটা আমাকে চৌকাঠ পার করে দেয়
কিন্তু সেখানেই আমার পা আমাকে আটকে দেয়।
তুমি চোখের জল সাঁতরে যেতে পার
কিন্তু এক ফোঁটা দুধ কেউ সাঁতরাতে পারে না।
আমার মৃত্যুটা অনেকদিনের কথা।

পঞ্জাবী কবিতা। কবি, অমৃতা প্রীতম। বাংলা অনুবাদ আমার





// তরাই //


উপলে খানখান চিরুণী
ধূসর শলাকায় বন্দী দেবদারুকে
বলে পথ করে দিতে
মেঘেরা আটকা পড়েছে মেঘের গায়ে
কাঁখে কোলে নীলাকাশ
বৈধব্যে নতমুখ
হেঁটে যায় ভূটিয়া শিশু
হিল কার্ট রোডের টুংটাং গানের ভেলায়।
স্বপ্নেরা নেমে আসে স্বপ্ন ফেলে
তরীমুখ মোছে পাউডার তিস্তায়
জলে ঘূর্ণিপাকে মাছরাঙা ঠোঁট শানায়
লতাপুতার ভাসন্ত শরীরে।
এইখানে দেখা কোর সিক্ত উপলে
নিঃশ্ছায়া দেবদারু বনে
ছোট এক মহানদীর জলে ভেসে
মনে রেখো স্বপ্নেরা জলপাথর
সব।"





// প্রারম্ভ //

আমার দিদিমা ছিলেন পাগল
এই পাগলপনাতেই একদিন তাঁর মৃত্যু হ’ল
আমার মামা, হাড় কিপটে,
দিদিমাকে ভাঁড়ার ঘরে রেখে
খড় দিয়ে ঢেকে দিলেন।
দিদিমা শুকিয়ে ঝুরঝুর
একদিন ফেটে ছিটকে পড়লেন
তাঁর বীজ উড়ে উড়ে জানালা গলে বাইরে
সুর্য ওঠে, বৃষ্টিও আসে
একদিন একটা বীজ গাছ হয়ে যায়
যার লালসায় আমার জন্ম।

সোনার দাঁত বাঁধানো বাঁদরদের নিয়ে 
আমি কি কবিতা না লিখে পারি? 

---------------------
মলয়ালী কবি কে. সচ্চিদানন্দের কবিতা। বাংলা অনুবাদ আমার।





যেই শুনলাম কূয়োটায়
একটা কচ্ছপ আছে, আমরা
বাচ্চাদের বাঁদর দল
ছুটে যাই কূয়োর পাড়ে।

উঁকি দিই ভিতরে, দেখতে পাই
আমাদের মাথা, আর নীল আকাশ।
আমরা ইঁট-পাটকেল ছুঁড়ে, বাঁশের ডগা দিয়ে
জলটা নেড়ে ঘেঁটে দিই
কিন্তু কচ্ছপটাকে দেখা গেল না।
আমাদের মাথাগুলোও উধাও।

পরে, আকাশের নীলটা যখন জ্বলে উঠল
কূয়োর অন্যপ্রান্তে জ্বলজ্বল করে, আর
আমাদের মাথাগুলো আবার ফুটে উঠল,
স্বচ্ছ জলে তাকিয়ে দেখি—
আরে, ওই তো, আমার চোখের পিছনেই
আমার মাথার খুলির মধ্যে,
কচ্ছপটা, ঘাপটি মেরে বসে আছে। 

-----------------------------------------------
---- ইসমাইল, তেলুগু কবি; বংলা অনুবাদ আমার





 // কারো একার //


যখন প্রত্যেকটি বাড়ি তাকিয়ে আছে পশ্চিম দিকে
আমার বাড়িটা মুখ ঘুরিয়ে পূবমুখো;

যখন সব ছেলের আছে ফর্সা মা,
আমার মা কালো, ফর্সা না;

যখন সবাই দ্রুত হাঁটছে,
আমি তখন এক অলস মাস্তুল;

আর ওরা সবাই যখন হাসির লটারি তোলে
আমি তখন নিশ্চিত একজন হেরো।

--- মলয়ালি কবি, আত্তুর রবিবর্মা; বাংলা অনুবাদ আমার"







"পড়তা হ্যায় ফুল বর্ক সে গুলজার কী তরফ
ধড়কে হ্যায় জী কফস মেঁ গম-এ-আশিয়ান সে
তুমকো তো ইলতিফাত নহীঁ হাল-এ-জার পর
অব হম মিলেঙ্গে আউর কিসু মেহরবান সে।
--- মীর তকি ‘মীর’

(ঝড়ল ফুল বিদ্যুৎ যেন বাগান জুড়ে
কাঁপছে বুকের খাঁচার ভিতর পাখির বাসার দুঃখ যত
খেয়াল তোমার মোটেই তো নেই চারিপাশের দুর্গতিতে
এবার আমায় যেতেই হবে অন্য কোন হৃদয় তরে।)"











// কালো রুটি //


একটা ছেঁড়া ঠোঙার বুকে
যে কবিতাটা কালো সিঁড়ি হয়ে ঝরছিল হঠাৎ
তার বুক চিরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়
টাইপসেটারের আঙুল চেঁছে কলম বানানোয় এমনটা
ঠোঙাটা আঁটসাঁটই, লিকেজ নেই
ভেতরে গরম আলুর চপের তেল ছড়িয়ে
প্রতিটি মুড়ির দানা ঝকঝকে
মুচমুচে
টাইপসেটারের আঙুল নেই থাকে না
সমীর চৌধুরির ছিল না
কালো রুটির জন্য ঠোঙার দরকার নেই
সমীর তাই ঠোঙা চেনে না।
সমীর মুড়ি-তেলেভাজা চেনে না।
সমীর কবিতা চেনে না
না চিনেই সে বেশ হেঁটে চলে গেল
                                           ১৪ সেপ্ট, ২০১২------------



// অনুবাদ //

পড়তা হ্যায় ফুল বর্ক সে গুলজার কী তরফ
ধড়কে হ্যায় জী কফস মেঁ গম-এ-আশিয়ান সে
তুমকো তো ইলতিফাত নহীঁ হাল-এ-জার পর
অব হম মিলেঙ্গে আউর কিসু মেহরবান সে।
                                 --- মীর তকি ‘মীর’

(ঝড়ল ফুল বিদ্যুৎ যেন বাগান জুড়ে
কাঁপছে বুকের খাঁচার ভিতর পাখির বাসার দুঃখ যত
খেয়াল তোমার মোটেই তো নেই চারিপাশের দুর্গতিতে
এবার আমায় যেতেই হবে অন্য কোন হৃদয় তরে।)
                                         --- অরুণ (অনুবাদ)



// না-কষ্টের কথা //

‘আমার কেউ নেই, মা বাবা ভাই বোন...’
সে কি! তা হয় নাকি? আট ভাই বোন না?
‘তবু। হয়। হয়েই থাকে। সারা বিশ্বজুড়েই হয়।’
তো কষ্ট পাচ্ছ খুব? মায়ের পেট ঘেঁষা এতজন! হবেই।
‘কষ্ট পেলে তো মিটেই যেত। আমার কষ্ট নেই।
বাবা ধুঁকছিলেন গভীর ক্যান্সারে,
জানালার শিক ছেড়ে ঘরের ভেতরে ঢুকিনি।
বাবা চ্যালাকাঠ। ছুঁইনি। প্রণাম না। কাঁধেও না।
বরং শ্মশানের পথ বেঁকে সিনেমায়, জংলী।
বোবা চোখ মেলে মা জল চাইলেন, দাদা ছুটে গেলেন, সেজদা, ছোটবোন
আমার হাতে জলের গ্লাস, আমি দেয়ালে ঠেস।
মা সবাইকে দেখলেন, আমাকে না।
দিব্বি সিঁড়ি বেয়ে নাটুদার দোকানে।
নাটুদা, মা মরে গেলো। একটা বিড়ি দেবে?
বিড়িটার তো কষ্টের বালাই নেই।
দাঁতের চাপে বন্দী, দাউ দাউ।
বড়দা মরে গেছে। জানি না কেনো মরে গেলো
ছিটকিনি তোলা ঘরে বন্ধ পড়ে ছিলো দেহ।
আমি শিকল খুলিনি।
অগাস্ট মাস, হাত পাখা নিয়ে পিঠের ঘাম শুকিয়েছি
বড়দাকে বাতাস করতে ছিটকিনি খুলিনি।
সকালে যখন কান্নার রোল উঠল, আমি কাঁদিনি।
আবার নাটুদার কাছে।
দাদাটা মরে গেলো। একটা বিড়ি দেবে গো, নাটুদা?
দুটো দিয়েছিল। একটা দাঁতের যাতায় জ্বলছিল
একটা কানে গুঁজে রেখেছিলাম।
মেজদাটাও মরে গেলো একদিন।
মুখ দিয়ে রক্তের নদী। বালতির জল লাল, আবার লাল।
আমাকে বলল, ফেলে আয়। কী ঘণ রক্ত! জলেও গোলে না।
কুয়োর মধ্যে ফেলতে থাকি। গুলে যায়।
সাফ জল। রক্তের রেখামাত্র নেই।
মেজদা বাঁচল না।
নাটুদা, মেজদাটা মরে গেলো। একটা বিড়ি দেবে?
সেই বিড়ি আর ধরে না।
নাটুদা চালাকি করে আমাকে ভেজা বিড়ি দিয়েছে।
রাগ হল। কষ্ট পাই নি তা বলে।
এবার বাড়ির বাইরে।
যক্ষা রুগীর রক্ত কূয়োর জলে মিশিয়ে সবাইকে মেরে ফেলার চেষ্টা।
কে যেন রায় দিল।
গেট আউট!

২১ মার্চ ২০১২.....................



ঘুম আসে না ঘুম আসে না
চোখের কোণে কালি
ঘুম আসে না ঘুম আসে না
বর্গীরা দেয় তালি
ঘুম আস না ঘুম আসে না
তীর বন্দুক হাতে
ঘুম আসে না ঘুম আসে না
হাত মেলাতে হাতে।।
মার্চ, ২০১২.....................।।