My Readers

Saturday, October 6, 2012

কবিতা আমার

চন্দ্রাহত


বাবা বলেছিলেন গোক্ষুরে চাঁদ দেখা যায়
আমি দেখেছিলাম চাঁদ, ছোট্ট চাঁদ ।
মকবুল বলল, সে চাঁদ দেখেছে গামলার জলে, গোয়াল ঘরে, স্থির।
অভী বলে গেল, গ্লাসের জলে আকাশের চাঁদ দেখেছে সে, কাঁপছিল
স্বপন বলল, পাহাড়ের গায়ে বৃষ্টি পিছলে নামলে
চাঁদ দেখা যায়।
দুলুমিঞা বলে গেল, নদীর জলে চাঁদ শুয়ে থাকে রাতভর।
কোথা থেকে অপু দৌড়ে এলো, হাফাচ্ছে
বলল, জানিস জানিস, আমি কাল রাতে
ডালের বাটিতে চাঁদ দেখেছি
বাটি ভর্তি চাদ
সবাই হো হো করে ওঠে, মিথ্যে কথা মিথ্যে কথা
ডালের ওপর চাঁদ দেখা যায় না।
অপু ঘাবড়ে যায়, জানতে চায়, যায় না বুঝি?




জলপাথর


উপলে খানখান চিরুণী
ধূসর শলাকায় বন্দী দেবদারুকে
বলে পথ করে দিতে
মেঘেরা আটকা পড়েছে মেঘের গায়ে
কাঁখে কোলে নীলাকাশ
বৈধব্যে নতমুখ
হেঁটে যায় ভূটিয়া শিশু
হিল কার্ট রোডের টুংটাং গানের ভেলায়।
স্বপ্নেরা নেমে আসে স্বপ্ন ফেলে
তরীমুখ মোছে পাউডার তিস্তায়
জলে ঘূর্ণিপাকে মাছরাঙা ঠোঁট শানায়
লতাপুতার ভাসন্ত শরীরে।
এইখানে দেখা কোর সিক্ত উপলে
নিঃশ্ছায়া দেবদারু বনে
ছোট এক মহানদীর জলে ভেসে
মনে রেখো স্বপ্নেরা জলপাথর
সব।



পদাতিক

তুমি বললে, তাই হাঁটা--
আমার অনুগত বিশ্বাস।
বললে, ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর
ছাতা খুলি না
মিছিলের মুখ বন্ধ ফটকে
বেয়নেট চমকায় তামাটে আকাশ
সিঁদুর লেপটে নেয়
প্রতিবাদী আসফল্ট--
আমার ভালোবাসায়।


শপথ

অন্ধকার আকাশ গর্ভে
যে-ঈশ্বরের অঙ্গুলি ছুঁয়েছিল
শস্যদানার জন্মনাভি,
সেই অঙ্গুলি তুলে বলি,
সাবধান। 


পাড়ি

হুইসেলের শিস এখন  বিড়াল
মাখামাখি লম্বা ছাদের নিচে টানটান
মা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রী, ইয়েট টু...
লোনা জল বুকের পাথরে গলে অনঢ় আকাট
খোপে খোপে মানুষ লম্বা পাড়ি
পৃথিবীর বুক বাঁধে কোমরের বেল্ট, কষে। 



পরবাস

দরজার কবাটের পিঠে পেরেক
ঝুলে আছে অমলিন।
বয়সে কাঁধ থেকে ঝুপ নামা মাথা
দু'পাশে ঝোলা হাতা ঝিম
ঝুলে আছে কতদিন... 

রোজই ভাবি এবার
ভাবতে ভাবতে কাবার ছয়টি দশক।




কবিতা বিন্দু

শ্বাসরুদ্ধ খনিমুখে , 
প্রপিতামহের কসমেটিক্সের সজ্জায় যতটুকু আলো, সবুজ। 
গাছেদের কি পিতা থাকে? মা?


মেঘের ছবি

চেনামুখ মেঘের আড়ালে
ছবির পাহাড়ে ভাঙে গড়ে
ছোটবেলা বড় বেলা এই বেলাও
এই এলো ধেয়ে শ্বেতশুভ্র পিতা
তার আড়ালে সলাজ নতমুখ মাতা
ভেঙে ভেঙে ফুটে ওঠে নির্বোধ বালক
বিস্ফারিত বিস্ময়ে দেখে
পৃথিবীর বুকে অজস্র ভীড় 
ভাইবোন শত্রুমিত্র হরিণ শকুন।

চোখের পাতা দুটো তীক্ষ্ণ করে লক্ষ করে দেখি
বালক ভেঙেচুড়ে ইথিওপিয়া
আফ্রিকা অশ্রুবিন্দু হয়ে ঝোলে
অষ্ট্রেলিয়ার  মাটি

চেনামুখ মেঘের আড়ালে গড়ে 
ছোটবেলা বড়বেলা -- এই বেলাও।


মাঝখানে

বোতলে বন্দী-সময়
ভেসে যাওয়া ঘাট থেকে ঘাটে
আমজামজামরুলের বন ছেড়ে
দিগন্ত-উধাও কলাইয়ের ক্ষীণস্রোতে

শুয়ে থাকা উন্মুক্ত
বাতাস সরে না
থেমে থাকা
বোতলে বন্দী সময়, এই জীবন


চলে যাওয়া

এ কেমন চলে যাওয়া
কোল ছেড়ে বারান্দায়
বারান্দা থেকে সিঁড়ি ভাঙা
মাটিতে দোপাটির ঢল
হাট খোলা দরোজা--

এ কেমন চলে যাওয়া
সন্তানের হাতে হাতমুঠো জীবন
স্বপ্নঘোর
গায়ের আচ্ছাদনে বাতাসের ঢেউ, নিচু
পাল ফুলে ওঠে তবু
নীল লেপা পৃথিবীর উঠান বেয়ে চলা--

এ কেমন চলে যাওয়া 
বটবৃক্ষ বিশাল জলকোলে উধাও
পাড় ভেঙ্গে নতুন পৃথিবী--

এ কেমন চলে যাওয়া ??










No comments: