My Readers

Sunday, April 21, 2013

কে দেবে পরিবর্তনের স্বাদ?

ধর্ষণ নিয়ে এত হৈ চৈ আগে ছিল না। কিন্তু তা বলে কি আগে আমাদের সমাজে ধর্ষণ হত না বা কম হত বা কম রিপোর্টেড হত? বোধ হয় না। আমরা ইদানীং ধর্ষণ মাত্রেই বিচলিত হয়ে পড়ছি অন্য কারণে, ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকদের নির্মম ও পাশবিক মানসিক বিকারের প্রমাণ পেয়ে। কেনো এই অবস্থা সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। 

মনে হয় না, সারাজীবনের কারাবাস বা ফাঁসীর মতো কঠোর আইন প্রণয়ণে আমরা ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা কমাতে পারব বা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা পাশবিক মানসিকতার নির্মমতাকে স্তিমিত করতে পারব। এটা তো ঠিক, নির্ভয় আইনের তোড়জোড়ের পরেই দিল্লিতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে, সেই সঙ্গে নির্মম পাশবিকতার মাত্রাও। কেনো? শুধুই কি পুলিশী তৎপরতার অভাবে? পুলিশ যদি পাঁচ বছরের ধর্ষিতা শিশু কন্যার বাবা-মায়েদের কথা মতো তৎক্ষণাৎ ডায়েরি করতেন বা অকুস্থলে ছুটে যেতেন, তবে কি ওই ঘটনার কোন হেরফের ঘটত? অবশ্যই না। 

ধর্ষণ কোন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ নয় যে দীর্ঘসময় ধরে তার ছক কষা হবে, এবং পুলিশের চরেরা তার আগাম হদিশ জোগাড় করবে। এটা একটা বিকৃত যৌন ক্রিয়া, তাৎক্ষণিক। সমাজ এক্ষেত্রে পাহারাদার হতে পারে না, তা সম্ভবও না। একমাত্র একজন ধর্ষকই আপন চেতনায় নিজের ওপর পাহারাদারের কাজ করতে পারে, সাম্প্রতিক কালের বিকৃত ঘটনাগুলোর আগে সংঘটিত অধিকাংশ ঘটনাতেই এই আপন-পাহারাদারিত্ব দেখা গেছে। এখন ধর্ষক চরিত্রেরও বদল ঘটেছে। কে এই নতুন ধর্ষক? বা আরো বিশদভাবে বলতে গেলে, কোথায় এই পশুর বাস? উত্তর একটাই, আমাদের মধ্যেই তাদের বাস, খোলসা করে বলতে, আমরা সবাই তার সহবাসী। তাইই যদি হয়, এই যে একের পর এক পাশবিক ধর্ষণের ঘটনা, তাতে আমাদের দায় কি কম? আমরা কি পরোক্ষে এজন্য দোষী বা দায়ী নই? 

লক্ষ করুন, সম্প্রতি আমরা ধর্ষকদের আইনের ভয় দেখিয়ে শুধরাবার চেষ্টা চালাচ্ছি, তাদের চেতনাকে আগাম শুধরাবার চেষ্টা তাতে নিহিত নয়। এই সময় আমাদের নতজানু হওয়ার কথা দেশের তাবড় তাবড় সমাজ বিজ্ঞানীদের সামনে। কিন্তু কোথায় তাঁরা? উকিল মোক্তারদের দিয়ে কি এই কাজ হয়? নাকি স্লোগান আর মোমবাতি জ্বেলে? পুলিশকে ট্রান্সফার করে কি এই কাজ হয় নাকি, প্রধানমন্ত্রীর চোখের জলে? নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক সমাজ প্রক্রিয়ায় গড়ে উঠেছে ছয় দশকের স্বাধীনতা পরবর্তী এই ধর্ষণ প্রবণ সমাজ, এই সমাজের চেতন। ভারতের এমন বস্তাপচা সমাজ-চেতনার পরিবর্তন দরকার। কিন্তু কে দেবে সেই পরিবর্তনের স্বাদ?

No comments: