My Readers

Saturday, April 20, 2013

গণতন্ত্র একটি শাসন ব্যবস্থা মাত্র, কোন সমাজব্যবস্থা নয়,


গণতন্ত্র একটি শাসন ব্যবস্থা মাত্র। গণতন্ত্র কোন সমাজব্যবস্থা নয়, এইটে মনে রাখা দরকার। তাই গনতন্ত্র একটি সমাজকে কতটা সাফল্য এনে দিতে পেরেছে, আমার সন্দেহ আছে।

কোন সমাজেরই ছকে বাঁধা কোন তন্ত্র থাকে না। পৃথিবীর সব সমাজই এক একটি একক বিন্যাস। সেই বিন্যাসও মুলত একটিমাত্র অভিঘাতকে ঘিরে, সেটা সেই সমাজের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির গুণমানই সেই সমাজের গুণমান নির্ধারক। তাই গণতন্ত্রের সফল বা ব্যর্থ প্রয়োগের সঙ্গে সমাজের গুণমানের কোন হেরফের আমরা দেখতে পাই না। নানা সমাজের ভিন্নতা ঠাহর করতে হয় একমাত্র তাদের সাংস্কৃতিক অবস্থানের নিরিখেই।

এ তো সত্যি, সমাজের সাংস্কৃতিক বহমানতাই সেই সমাজের প্রাণবন্তার হদিশ দেয়। সমাজ নিজে থেকে এই বহমানতা সৃষ্টিও করতে পারেমা, রক্ষাও করতে পারে না। গোষ্ঠীবদ্ধভাবেই হোক বা একক ভাবে, সমাজের সাংস্কৃতিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে হলে চাই, সেই শ্রীবৃদ্ধিতে সমাজবদ্ধ সব মানুষের কম-বেশি অবদান। এর বিকল্প কোন উপায় তো দেখি না। আমি মনে করি, ব্যক্তির (ও গোষ্ঠীর) অবদানই সমাজের মূল গতিপথ ঠিক করে। এই সব অবদানই সমাজকে সামনের দিকে সচল রাখে। আমরা সবাই লক্ষ্য করেছি, সমাজের যে-কোন শাখা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অবদানে যত বেশি সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত, সেই সমাজের অগ্রগতিও ততই আকাশ ছোঁয়া, আর যে-সমাজে তা কম, সে সমাজ চিহ্নিত হয় তত অনগ্রসর হিসেবে। সমাজে এই অবদানের ধারা যদি কোণ কারণে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়, মানতে হবে সে সমাজ তখন স্থবিরত্ব বরণ করেছে।

এই পটভূমিতে আমাদের বাংলার বর্তমান অবস্থানটাকে বিশ্লেষণ করতে চাই।

সমাজই ইতিহাস গড়ে, ইতিহাস তো সমাজ তৈরি করে না। এটা মেনে নিলে দেখব, বাংলার বর্তমান সমাজে ঘটছে ঠিক এর উল্টোটি। আজ নয়, গত কয়েক দশক ধরেই। আমরা বর্তমানকে ছেড়ে অতীত ইতিহাসকে কেন্দ্র করেই আমাদের সাংস্কৃতিক বহমানতাকে সচল রাখতে সচেষ্ট রয়েছি, নিজেদের গৌরবোজ্জল করাকে একমাত্র উপায় মনে করেছি। আমরা আমাদের বর্তমানের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অবদানে আমাদের সমাজকে সমৃদ্ধ করতে চাই নি চাইছিও না। ফলে আমরা ক্রমশ সরে সরে যাচ্ছি স্থবিরতার দিকে। গেছিও।

গণতন্ত্রের একটা বড় সমস্যা হল, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অচিরেই তার অপব্যবহারে শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করে ফেলে। সেই শক্তি রাজনৈতিক হতে পারে, অর্থনৈতিক হতে পারে, এমনকি বাহু শক্তিও হতে পারে। শুধু যা হয় না, তা হল, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কখনই সাংস্কৃতিক শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করে না, শক্তিশালী করে না। কেন না, তা করা যায় না বলেই। কোন শক্তির ব্যবহারে বা অপব্যবহারেই সাংস্কৃতিক শক্তিকে কেন্দ্রীভুত করা যায় না। সাংস্কৃতিক শক্তির ধর্ম বিস্তার, কেন্দ্রীভূত হওয়া নয়।

গণতন্ত্রে শক্তির এই ভয়াবহ অপব্যবহার আমরা বাম জমানার কয়েক দশকে যে ধীর গতিতে সংঘটিত হতে দেখেছি, বর্তমানের তিন আনা দশকেই তা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চিট ফান্ডের দৌরাত্মই বলো বা পাশবিক ধর্ষণকান্ড বা পাশাপাশি পুলিশী নিষ্কৃয়তা বা অতি সক্রিয়তা, কলেজে, কারখানায়, অফিসে, হাসপাতালে, রাস্তাঘাটে যে শক্তি-উন্মত্ত পাশবিক উল্লাস আমরা অহরহ দেখছি, সবই জানবে, গণতান্ত্রিক-রক্ষাকবজের জোরে কেন্দ্রীভূত শক্তির অপব্যবহারের নামান্তর মাত্র।

No comments: