My Readers

Monday, November 12, 2012

Not that Everyone gets Chance to Enjoy Dewali/Kalipuja His ways




আমাদের ছোটবেলার শহরটা ছিল ছোট একটা জেলা সদর। আমার কৈশোরের শেষ বেলা অবধি বিদ্যুৎ আসে নি সেখানে। তাই পুজোর সময় যেমন আকাশ ঝলমলিয়ে মলিন চাঁদ ফুটত, কালিপূজার রাতে তেমনি সারা শহর কালি মেখে অন্ধকারে ডুবে যেত। দূর কোনো বাড়ির প্রদীপের শিখাতেই পূর্ণিমার আলো ছড়িয়ে পড়ত সারা পথ জুড়ে। সে এক দুরন্ত অনুভূতি। মা অন্ধকারে বের হতে দিতেন। তবু, মা না-চাইতেও, আমরা মাকে আশ্বস্ত করতাম। দুর্গাপূজায় নাড়ুর জন্য ব্যবহৃত নাড়কোলের আধখানা খোলের গর্তে আধখানা মোমবাতি জ্বেলে, টর্চ বানাতাম। মা হাসতেন। আজও সেই হাসিমুখটা চোখে ভাসে।

আমরা গরীব ছিলাম অন্য কারণে। বাবা রাজনীতির মানুষ, নেতা। প্রায়ই চলে যেতেন জেলে। সরকারের নানা অছিলায়। মা সংসার চালাতেন বাবার কিছু দিনের ওকালতির জমা টাকায়। আমরা আট ভাই-বোন। আমরা প্রত্যেকে এটা বুঝতাম ষোল আনা। শহরের গুদরি বাজারের এক প্রান্তে ছিল চাবিওয়ালাদের চালা। আমরা দু ভাই সেখান থেকে ফুটোওয়ালা লোহার চাবি কিনে, সেই চাবিকে হাত- ফুট বাতার মাথায় কষে বেঁধে, দিয়াশালাইয়ের কাঠির মাথা চেঁছে বারুদ নিয়ে চাবির ফুটোয় সেই বারুদ ঠেসে, ভোঁতা একটা পেরেক দিয়ে ফুটোটাকে টাইট বন্ধ করে, চাবিটা উল্টো করে পাথর-শক্ত কিছুতে দরাম করে হাতুড়ির মতো মারলেই, দুম! মানে, আমাদের ছোটবেলার এটম বোমা!

কালিপূজার পরেরদিন সকালে মাঠ রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত তারাবাতির দগ্ধ শিক, ফাটা বোমার ছিন্নভিন্ন কাগজ, বোমা ফাটার ধূসর ছ্যাতরানো দাগ আরো কত কি। সবকিছুই শিশিরের চোখের জলে ভেজা ভেজা। মন খারাপ হয়ে যেত। কান্না পেয়ে যেত। আমি কোনদিনই মহান নই। আমি আজও নানা জায়গায় ঈর্ষান্বিত মানুষ। জানি না, বড় হয়ে অনেক অনেক বাজি পোড়াবার শপথ সেই সব দিনে নিয়ে ছিলাম কিনা। কিন্তু কী এক অসামান্য মানসিক রসায়নে, যত বড় হয়েছি ততই বাজি পোড়ানোর শখ ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে গেছে। এত স্তিমিত হয়ে গেছে এক সময়, আমার দু ছেলেমেয়ের একজনকেও অনেক বাজির মজা পেতে দিতে পারিনি। ওদের একজনও বাজির প্রতি আগ্রহী হতে পারে নি। এই নির্মমতার জন্য নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। ওদের ছোটবেলার একটা উত্তেজনা আমার কারণেই উধাও হয়ে গেছে।
1Like ·  · 

No comments: