My Readers

Thursday, November 8, 2012

A Letter to Malay Roychaudhury


শ্রদ্ধেয় মলয়দা,

আপনার ফরওয়ার্ড করা দুটো লেখাই খুঁটিয়ে পড়লাম।

এই সময়ে এমন লেখা প্রকাশ করাটা সমুচিৎ হয়নি। আমি এমন কাজকে  ইনডিসেন্ট মনে করি। সাহিত্যের লড়াইয়ে শোভনতা প্রথম শর্ত মনে হয়। ৩৬৫ দিন এমন লেখাকে কেন তোল্লাই দেবে এটা লেখকের অনুমান করা উচিৎ ছিল। নয়ত, অনুমান, সে সুযোগ তিনি নিজেই খুঁজে নিয়েছেন। যাক গে, আমার কাছে সব বড় না। (শক্তিদার ছবিটা আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে নেয়া, সম্ভবত আমার ফেসবুক থেকে। আমাকে না-জানিয়ে একাজ করা ঠিক হয় নি। বিষয়ে আমি ৩৬৫ দিনের এডিটর, আমার বন্ধু, সুব্রত সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলব)

মলয়দা, আমি নানা সময়ে নানা লেখায় নানা প্রসঙ্গে একথাই সজোরে বলেছি, কল্লোলের পরে বাংলা সাহিত্যেরএকমাত্রউল্লেখযোগ্য আন্দোলন, হাংরি। এবং তারপর থেকে গ৫০ বছর ধরে বাংলা সাহিত্য একটি ধাবমান আন্দোলনের জন্য ঠায় বসে আছে। ইতি উতি আন্দোলিত হবার চেষ্টা চলছে বটে, কিন্তু সেসব হাংরি আন্দোলনের আঙ্গিকের বাইরে নিজেদের শত চেষ্টাতেও সাজাতে পারেনি, পারছেও না। সবাই এবং সব রিপিটেটিভ। শাস্ত্রবিরোধী গল্প আন্দোলনই বলুন, বা শ্রুতি বা সত্তর দশক, এমন কি খুদে জিরো আওয়ার এবং এবং... আর এতেই প্রমাণিত হয়, হাংরি প্রভাবের ব্যপকতা।

কিন্তু এই লেখকের মতো ভক্তপ্রাবন্ধিকএবংরিপোর্টার’-দের উপচে পড়া আগ্রহে হাংরি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অনায়াস ঠাঁই নিতে বাধা পাচ্ছে। হাংরিকে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা দিতে সুনীলের সমর্থন-অসমর্থনের মূল্য দিলেন কেনো আপনাদের এই ভক্ত? বাংলা সাহিত্যেরমাইনে পাওয়া’-দের বিরুদ্ধে     ছিল কি হাংরির আন্দোলন? বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃতিতে হাংরি কার/কাদের বিরুদ্ধে কতটা সংগ্রাম করেছে, এটা প্রতিষ্ঠা করা জরুরী নাকি, বাংলা সাহিত্যকে কতটা সমৃদ্ধ করেছে হাংরি এবং কী ভাবে-- সেটা সাধারণ পাঠকদের জানানো জরুরী বেশি? বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ঠাঁই পেতে হলে (এটাকে আপনি নিশ্চয়ই কলোনিয়াল মেন্টালিটি বলবেন না) বৃহত্তর পাঠকগোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতেই হবে। এই ওঠাটায় হাংরি কতটা সুনীল-বিরোধী বা সুনীল কতটা হাংরি-বিরোধী বা হাংরি কতটা প্রতিষ্ঠান-বিরোধী সেই তথ্য জরুরী নয়।

নিউইয়র্কের গ্রিনিজ ভিলিজে যাওয়ার উদ্দেশ্যও ছিল (আপনি জানেন) দধিচির হাড়ের মজ্জাটাকে পরখ করা। পরে প্রিন্সটনে জ্যোতির্ময় দত্তের (যিনি আদালতে আপনাদের সমর্থন করেছিলেন) বাড়িতেও গেছি। আলোচনা করেছি। উনিও আমার সঙ্গে একমত, আপনারা যথার্থ আন্দোলন করলেও আপনাদের ভক্তরা হাংরি আন্দোলনকে পচিয়ে গলিয়ে দিচ্ছে, দিয়েছে। এই লেখা দুটি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

প্রভাতদা (চৌধুরি) রবীন্দ্রনাথের চেয়ে ভালো গদ্য লেখেন (আমাকে নিজের একটি বই উপহার দিয়ে তাতে কথাই উল্লেখ করেছেন) বলে চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করলেও আমরা, সাধারণ পাঠকরা, তা মানব না, যতক্ষণ না আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান প্রাজ্ঞ সমালোচক/প্রাবন্ধিক যুক্তিতর্কতথ্য দিয়ে তার প্রমাণ রাখছেন। হাংরির ক্ষেত্রেও আমার এই কথা। হাংরির প্রচার চাইনা, প্রতিষ্ঠা চাই। আর সেটাই বাংলা সাহিত্যের যে কোন সৎ পাঠকের আকাঙ্ক্ষা।

এসব হাংরির প্রচারের জন্য লিটল ম্যাগাজিনে লেখা চলে। সেসবের পাঠকের সংখ্যা সীমিত সত্ত্বেও তাদের হাংরি নিয়ে হাল্কা হলেও এক ধরণের ধারণা বা শ্রদ্ধা আছে। তাবলে ৩৬৫- মতসাধারণ পাঠকদের কাছে এই লেখার কোন পজিটিভ ইমপ্যাক্ট হবে বলে বিশ্বাস করেন? বরং হাংরি বিষয়ে একটা ভুল ইঙ্গিতই ছুটে গেছে।

আমি মনে করি, তা হাংরি আন্দোলনের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। মিডিওক্রিটি এখন বাংলার বাতাবরণ। আপনাদের সোনার ধানের ক্ষেতের ঢেউ এখন নেই, মলয়দা। এটা মনে রাখলে, এই অতি সাধারণ+ক্ষতিকর লেখাটাকে বাতিলই করতে হয়। করলামও।

ঠাঁই/প্রচার/প্রতিষ্ঠা/সমর্থন/ইত্যাদিকে হাংরি রোম্যান্টিকরা তোয়াক্কা না- করতেই পারেন। তবে বলে রাখি, এই চামচেবাজি চলতে থাকলে আপনার আর সমীরদার মৃত্যুর পরে হাংরিকে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে না।

প্রণাম। 
6 November 2012


No comments: