My Readers

Monday, March 19, 2012

My Birthday 67 years back

বাঁধানো খাতার নিটোল ৬৭টি পাতা উল্টে দিয়েছি গত ১০ মার্চ রাতে। আজ আমার জন্মদিন। জন্মেছিলাম ন্যাড়াপোড়ার দিন। পূর্ণিমা ছিল না। আমরা ছয় চম্পা, আর দুই পারুল।

আমার জন্ম-সময়ে ছিলেন, ম্যাটার্নিটির নার্স, রেণু কাকিমা। তার মুখে শুনেছি, বাবা ম্যাটার্নিটির সিঁড়িতে সাইকেলটাকে হেলান দিতেই, নার্স কাকিমা ছুটে গিয়েছিলেন, ‘ভোলাদা, ভোলাদা! ছেলে হয়েছে! ট্রে ভর্তি! লম্বা, ফর্সা। একরাশ কালো কুচকুচে চুল মাথায়।‘ শুনে মুচকি হেসে বাবা সাইকেল ঘুরিয়ে প্যাডেলে পা চেপে বলেছিলেন, ‘যাক, দেশের কাজ তো করতে পারবে!’ বাবা ছিলেন উকিল। এবং কম্যুনিস্ট। মা-বাবা দুজনেই তেভাগার প্রথম সারির নেতা। বাবার এই কম্যুনিস্টি আচরণ আমাকে বহুদিন অবাক করেছে।

পরে,১৯৭২ নাগাদ একদিন আনন্দবাজারের লাইব্রেরিতে জন্মদিনের কাগজটা খুলে দেখেছি, আমার জন্মদিনে মন্টগোমারি বার্লিনের ২০ মাইল দূরে কামান দাগছেন, কলকাতায় রক্সি সিনেমায় চলছে ‘কিসমত’ ছবির ৭৫ সপ্তাহ, খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনের সিংহভাগ জুড়ে সিফিলিস গনোরিয়ার চিকিৎসা-উপায়। অন্যদিকে, বাংলার গ্রামের পর গ্রাম কেরোসিনের অভাবে নিষ্প্রদীপ। সেখানে খবরের কাগজ গায়ে- কোমরে জড়িয়ে বাপ-মা ভাই-বোন লজ্জা ঢাকছে। শহর-কলকাতায় কালোবাজারি-মুনাফাবাজ-মজুতদারদের রমরমা। গ্রামে জোতদারদের লাঠি। চারদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গদগদে ক্ষত। বাংলায় আমার প্রথম জন্মদিনে বস্ত্রহীন, আলোহীন, খাদ্যহীন বাংলার মানুষ প্রতিবাদে ওয়েলিংটন স্কোয়ার মিটিং করছে। দিনাজপুরের কংগ্রেস ময়দানেও (এখন আকাডেমি স্কুলের মাঠ) বসেছে মিটিং। সেখানে বক্তাদের মধ্যে বাবার নাম। এমন এক অস্থির সময়ে বাবা কি সাইকেল ঘুরিয়ে ভুল করেছিলেন? অনিচ্ছার ইচ্ছাতেও কি প্রত্যয় থাকে?

জানি না। এমনই এক পৃথিবীতে আমার আসা। তবু আমার জীবনের প্রতিটি পাতা কিন্তু নিটোল। ঝড়-ঝঞ্ঝা তো জীবন-সংগ্রাম, সে সব তো জীবন না। আমার সেই নিটোল জীবন আজো বহমান।

No comments: