My Readers

Wednesday, October 27, 2010

I covered Bangladsh War as a Correspondent

আমি কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার যুদ্ধ সংবাদদাতা হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কভার করেছি। কিন্তু সাধারণত যুদ্ধ-সংবাদদাতা বলতে যা বোঝায় সে ভাবে নয়।

১৯৬৮ সালে কলকাতার সংবাদপত্র জগতে আমার প্রবেশ। তখন আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনে ইংরেজী ও সন্ধায় সাংবদিকতা নিয়ে পড়াশুনো করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের ক্লাশের আমাদের মাস্টারমশয়, দক্ষিণারঞ্জন মজুমদার সে সময় প্রথম শ্রেণীর দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার নিউজ এডিটর। আমাকে তিনি তাঁর কাগজে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর ছোটখাটো খবর লিখতে দিয়েছিলেন, অনিয়মিত। আমি তখন ঢাকার এক দৈনিকে কলকাতা থেকে সখের সংবাদদাতা (স্ট্রিঞ্জার)। পাঁচ বছর আগে সীমান্ত পেরুনো পূর্ব-পাকিস্তানী উদবাস্তু ছেলে আমার কাছে সেটা বড় কোন ব্যাপার ছিল না, কেননা, সেখানকার সে সময়ের টালমাটাল রাজনীতির গতি-প্রকৃতি আমি ভালই জানতাম। তাই ঢাকার কোন্‌ খবর কলকাতায় আর কলকাতার কোন্‌ খবর ঢাকার কাছে গুরুত্বের তা অনুমান করা আমার পক্ষে খুব একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল না।

১৯৬৮ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন খুব শক্ত দানায় বদলে যাচ্ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেই আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি। আমি লক্ষ্য করতাম, স্বাধীনতার পরে শহুরে হিন্দু রাজনীতিকরা বিশাল সংখ্যায় দেশত্যাগী হলে, পূর্ববাংলা্র সবক্ষেত্রেই রাজনৈতিক চেতনায় এক রকমের শিথিলতা দেখা দিয়েছিল।সেই ফাঁকটা পূরণ করছিল দেশের ছাত্ররা। মুজিবর রহমান স্বাধীনতা-পূর্ব ছাত্র আন্দোলনের আগুনে নিজেকে শেঁকেছিলেন। তাই, তার নেতৃত্বে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটল মূলত ছাত্র মহলেই।
মনে আছে, আমি তখন মিডল্‌ স্কুলের ছাত্র। দিনাজপুরে। ঢাকা থেকে নেতারা আসতেন। স্টেশন রোডে কোন এক দোতালায় আমরা স্কুলের ছাত্ররা বেশ কয়েকটা মিটিং-এ যোগ দিয়েছিলাম। তখন আমার বয়স ১১/১২ বছর হবে কিনা সন্দেহ। সেই সব মিটিং-এ ‘সিনিয়র’ রাজনীতিবিদদের কখনো দেখিনি। আমার বাবা-মা স্বাধীনতার সংগ্রামী ছিলেন। দুজনেই ব্রিটিশ সরকারের নানা জেলে নিজেদের যৌবনের সোনালী দিনগুলো কাটিয়েছেন। ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে ছাত্র নেতাদের আনাগোনাই বেশি দেখেছি। আজ আওয়ামী সরকারের অনেক মন্ত্রীই সেই ছাত্রনেতাদের কয়েকজন, যদিও পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক মতবাদে এদের সঙ্গে বাবার বিরোধ গড়ে উঠেছিল।

বাবা-মাকে ঘিরে একসময় যাঁদের আলোচনা করতে শুনেছি, দেখেছি, তাঁরাও বাবা-মা’র তুলনায় বয়সে বেশ নবীন। তেভাগার গুরুদাস তালুকদার, কালীপদ সেন, বিভূতি গুহ, আন্দামান থেকে মুক্তি পাওয়া অনিল রায়, হৃষিকেশ ভট্টাচার্য এরা বাবা-মা’র কাছাকাছি বয়সের ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানে সিনিয়র রাজনীতিবিদ প্রথমে দেখি শহীদ সোহরাবর্দিকে, পরে ‘হুজুর’ মৌলানা ভাসানীকে। ভাসানী সাহেব আমাদের বাড়িতে এসেছেন কয়েকবার, রাতেও ছিলেন বলে হাল্কা মনে পড়ছে।

এত কথা বলার কারণ এইটুকু বোঝাতে, আমি কেন বিশ্বাস করতাম বা আজও করি যে, পূর্ব-বাংলার রাজনৈতিক চেতনার বিকাশে ছাত্ররাই অগ্রণীর ভূমিকা নিয়েছে। সন্দেহ হয়, ছাত্রদের একটি প্রজ়ন্ম (৩০ বছর, ১৯৭৭ অবধি) যদি দেশ ভাগের পর নিষ্ক্রীয় বসে থাকত, তারা যদি শুধুই পড়াশুনোর মধ্য দিয়েই দেশ গঠনের দুঃস্বপ্ন দেখে চলত, বলতে পারি, বাংলাদেশের জন্ম আজও সম্ভব হত কিনা।

এই বিশ্বাস থেকেই আমার জীবনের প্রকৃত সাংবাদিকতার শুরু। পাকিস্তান জুড়ে চলছে ধরপাকড়, আয়ুব ধীরে ধীরে তলিয়ে যাবার প্রক্রিয়ায় বেপরোয়া। আমি, তখন ছাত্র, যুগান্তরের সম্পাদকীয় দফতরে, একটা লেখা হাতে নিয়ে পৌঁছে গেলামঃ ‘ছাত্র শক্তিই আয়ুবকে টেনে নামাচ্ছে’। আমি নানা ব্যাখ্যায় সাজালাম আমার বিশ্বাস-নির্ভর বক্তব্য। আমি ভাবতেও পারিনি, লেখাটা এতটা সারা ফেলবে সিনিয়র জার্নালিস্টদের আসরে। ওই একটি লেখাই আমাকে বানিয়ে দিল, যুগান্তরের সা[প্তাহিক কলামনিস্ট।
এরপর টানা তিন বছর যুগান্তরে কলাম লিখেছি। পত্রিকার কর্মী হিসেবে নয়। কন্টাক্টে। সবটাই পাকিস্তানের ওপর তা নয়। আমি বিষয় বেছে নিলাম, যুগান্তর কর্তৃপক্ষও সায় দিলেন, ‘প্রতিবেশি রাষ্ট্র’। বলাবাহুল্য, আমার কলামের অধিকাংশ জায়গা নিতে থাকল পাকিস্তান, বিশেষ করে, পূর্ব পাকিস্তান।

১৯৭১। পূর্ব-পাকিস্তান তখন আগ্নেয়গিরির ওপর, বিস্ফোরণে ফেটে পড়ার অপেক্ষায়। মওলানা আর মুজিবের মধ্যে চলছে রাজনৈতিক জমি দখলের চোরাগোপ্তা লড়াই। বাইরের পৃথিবীও গোপনে একে ওকে নিজমতে টেনে নেবার ফাঁক ফোকরের সন্ধানে কৌশলে রত। কলকাতার সংবাদপত্র জগতেও সেই লড়াইয়ের ছাপ। যুগান্তরে আমি তখনও পেইড স্টাফ নই। ১৯৬৮ সালেই, ২২/২৩ বছর বয়সে বিয়ে করেছি, আন্ডারগ্রাজুয়েট ক্লাশমেটকে। বস্তুত তখন বেকার, ট্যুশন নির্ভর জীবন। ডাক এলো আনন্দবাজার থেকে। বাংলাদেশ কভার করে ফিরলেই চাকরি। ্রাজি হয়ে গেলাম। শর্ত হলঃ ১। ফিরলে চাকরি। ২। যতদিন ফিরবনা, স্ত্রী পাবে মাসে মাসে ৪০০ টাকা এবং ৩।মারা গেলে স্ত্রী পাবে চাকরি, আনন্দবাজারেই।

২৩ মার্চ, ১৯৭১। ঢুকে পড়লাম উত্তাল পূর্ব পাকিস্তানে। দেখি, পেট্রাপোল সীমান্তে পতপত করে উড়ছে লাল সূর্য বুকে অসংখ্য সবুজ বাংলা দেশ। দুই গাছে বাঁধা দড়িতে দুলছে নৌকোর কাটআউট।...... (চলবে...)

2 comments:

মাসুদ করিম said...

আরো কিস্তি কখন পাব? অপেক্ষা করছি।

nachhorbanda said...

সবার আগে এই পোস্টটাই পড়লাম। তুমুল আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করে দেখি দুম করে শেষ হয়ে গেল। আপনি এটা শেষ করুন। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।