PLEASE READ FROM BOTTOM TO ENJOY THE SEQUENCE
43 // আমাদের যাত্রা হ'ল শুরু //
বৌভাতের অনুষ্ঠান খুব জাঁকজমকের সঙ্গে আয়োজন করল চার বন্ধু। কী করে সম্ভব করল, আজ এই চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর পরে কেউ আর তা মনে করতে পারে না। অমর তাদের ভেরি থেকে মাছ এনেছিল, অর্জুন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্যান্টিন থেকে কমলা ভোগ জোগাড় করেছিল, ব্যস আর কারো মনে নেই কিছু। অবশ্য আমি ছাড়া এ স্মৃতি বয়ে বেরাবার ওদের কোনদিন দরকারও পড়ে নি। ওই একুশ কুড়িতে ওদের কাছে আমার বৌভাতের চেয়ে আরো অনেক আকর্ষণীয় বিষয় অবশ্যই ছিল। আমি ছাড়া বাকি চারবন্ধুর ছিল বাবা-মা ভাই বোন, তো ওদের কাছে প্রেমে পড়া বা সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে করার মত অবাস্তব কোন ভাবনাও ছিল না।
বৌভাতের সকালেই অর্জুনের নির্দেশে চন্ডী তার পেশিবহুল শক্তিমান চেহারা নিয়ে দীপ্তিদের বাড়ি থেকে ‘বিয়েতে পাওয়া’
মশারি টাঙানোর সুবিধা সমেত চার খুঁটি চার হাতওয়ালা খাট, আলনা, আলমারি, লেপ তোষক বালিশ, বাক্স-পেঁটরা, বিয়েতে পাওয়া গিফট ইত্যাদি সাপটে সুপটে নিয়ে এসে আমার মেঝে-মাত্র ঘরটাকে বিকেলের আগেই ভরাট করে রেডি করে ফুলমালা ইত্যাদি দিয়ে ফুলশয্যা সাজিয়ে দিল। মেয়ে বসল সেখানেই। উপায় তো নেই, ঘর বলতে একটাই। চিলতে উঠোনে খাবারের ব্যবস্থা, রান্নাবান্না সব পাশের পরিত্যক্ত জায়গা সাফ সুতরো করে। হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল বিকেল থেকেই। আমাদের ঘরের সামনে বারান্দা, পাশের ঘরে আর এক ভাড়াটে, ভাই-বোন, বোন পড়ে ডাক্তারি, তো আমাদের যৌথ বারান্দাটায় চেয়ারের সারি। অর্জুন সত্য চন্ডী অভীরা কী করে অতটুকু জায়গায় এতবড় আয়োজন করল এখন ভাবলে বিস্ময় জাগে। এটুকুই মনে আছে, দীপ্তি অর্জুনকে প্রতিশ্রুতি রাখার জন্য উপচে পড়া খুশিতে জড়িয়ে ধরেছিল। মানে, দীপ্তিদের বাড়ির লোকেদের কাছে তার সম্মান ক্ষুন্ন হবার মত বৌভাতের আয়োজনটা ছিল না।
পরের কয়েকদিনে বৌভাতের উদবৃত্ত খাবারটাবার দিয়ে চালাবার পর এলো অষ্টমঙ্গলা। দীপ্তির সেজদি, ন্যাশনালের ডাক্তার, আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ে গেলেন আমাদের। শ্বশুড়বাড়ি থেকে ফিরে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’
শুরু হ’ল আমাদের সংসার যাত্রা।
পরদিন সকালে উঠে দীপ্তি চা করে নিয়ে এলো রান্নাঘর থেকে, কেরোসিনের স্টোভ জ্বালিয়ে। আমি সেই ফাঁকে বিছানার চাদর টান টান করে খাটের হেলানে পিঠে দেবার জন্য পাশাপাশি দুটো নরম বালিশ রেখে রেডি। আমাদের দুজনের জীবনে এইই ছিল দু’জনের স্বপ্নসময়-- ঘুম থেকে উঠে, মুখোমুখি বসে চা খাওয়া। চা খাওয়া শেষ হলে দু’জনে নেমে যাই নিচে।
একতলার বারান্দা ঘেঁষা একটা ঘরে থাকতেন এক ফরসা টুকটুকে বিধবা, সঙ্গে কোমড় ভাঙা ছেলে, আমাদের চেয়ে অনেক বড়, শুরুতে কংগ্রেস এবং পরে তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামা। আমরা ভাড়া নেবার দিন থেকেই এই সহৃদয় মহিলা আর তাঁর ছেলে হয়ে গেলেন, আমাদের প্রিয় মাসীমা আর গোরাদা। কোমর থেকে ওপরের দিকটা ছিল শক্ত, গোরাদা হাঁটতেন, বসতেন বৃদ্ধ কুঁজো মানুষের মত।
দীপ্তি কয়লা ভাঙার একটা হাতুড়ি চাইতেই, মাসীমা চোখ কপালে তুললেন, ‘অ্যাঁ, তুমি কয়লা ভাঙবে? ডাক্তারবাবুর মেয়ে কয়লাভাঙবে কী গো!?’ আমি বলি, ‘আমরা দুজনেই ভাঙব। আজকের জন্য দিন, পরে আমি একটা কিনে নেব।‘ আমরা কয়লা গাদার পাশে দু’টো ইঁট পেতে কয়লা ভাঙতে বসে যাই। দীপ্তির সোনার চুড়ি জড়ানো হাত ঝনঝনিয়ে কয়েকটা কয়লা ভাঙতেই বাড়িউলি পিসিমার কাজের বৌ আমাদের কাছে এসে দাঁড়ায়। আমি বেছে বেছে ছোট ছোট কয়লা দীপ্তির দিকে এগিয়ে দিতে থাকি, ও খুট খটাস করে করে তা ভাঙতে থাকে। কাজের বৌ, পারুলদি, দীপ্তির পাশে বসে, ‘আমায় দিন নতুন বৌদি। আমি ভেঙে দিই।‘
বুঝতে অসুবিধা হয় না, ‘নতুন বৌদি’কথাটার মধ্যে একটা শ্লেষ আছে, হয়ত ভালোবাসাও। আমি বাধা দিই, ‘তোমাকে দেবার মত টাকা আমাদের নেই গো।‘ ঝটতি জবাব, ‘টাকা দিতে হবে না। আম এমনিই ভেঙে দিচ্ছি।‘
আমাদের আত্মসম্মানে হাত দিয়ে ফেলেছে সে, বলি, তা হয় না। তুমি কাজের মানুষ, তোমাকে বিনে পয়সায় কাজ করাব কেন? ছেড়ে দাও। আমরাই ভেঙে নেব।‘ পারুলদি নাছোড়, ‘কত দিতে পারবেন?’
‘তুমিই বলো, কত নেবে?’
পাল্টা জবাব, ’১৫ টাকা।‘
‘এতো টাকা নেই গো। পারব না। ছেড়ে দাও।‘ সে ছাড়বে না, ‘আমি মাসে ছ’ টাকা নেব। এটা তো পারবেন?’ লজ্জায় পড়ে যাই। দীপ্তিকে উঠে আসতে বলি। পারুলদি দীপ্তিকে বলে, আপনি ওপরে যান, বৌদি। উনুন ধরে গেলে ডেকে আনব।‘
ওপরে চলে আসি। ‘পারুলদি কি দীপ্তির বাবাকে চেনে? সে কি দীপ্তির বাবার রুগী? দীপ্তি বলল, ‘বেলেঘাটার বস্তীর রুগী কাঁকুড়গাছিতে যাবে বলে তো মনে হয়না।‘ লক্ষ করলাম, আমার জীবন আমার নয়। শুধু দীপ্তিরও নয়, সেই সঙ্গে অন্যদের পরিশ্রমেও গড়ে উঠছে আমার জীবন-ইমারত। পরেও লক্ষ করেছি, আমার বাকি জীবনেরও একই সরলরেখা।
একটু দূরে বি. সরকার বাজার। আলু আর পেঁয়াজ নিয়ে এলাম। চাল ডাল আর তেল বিয়ের আগেই কিনে রেখেছিলাম, সঙ্গে কয়লা আর উনুন। আজ হবে আলুর দম আর ভাত। আমাদের দু’জনের সংসারে প্রথম রান্না। কলেজ ট্যুশানী দুটোই বন্ধ। এখন শুধুই পাশাপাশি। পাখির মত, নাকি মেঘের মত? নাকি দুটি গাছের মত? নাকি চিরন্তনী দুটি পাহাড়ের মত? জানা ছিল না সেদিনও, জানা নেই আজও। তবে যতটুকু মনে আছে, তা পাশাপাশি কাছাকাছি থাকার আনন্দ, পরমানন্দ!
রান্না হ’ল। রান্না ঘরেই মেঝেতে আসন পেতে দু’জনে মুখোমুখি বসে সেই প্রথম খাওয়া। উত্তেজনা বিস্ময় অবিশ্বাস সবকিছুর মিশেলে আমাদের দু’জনেরই যে শীত শীত করছিল, অনুমান করতে পারি। রান্নাঘরের বাইরে মগের জলে মুখ ধুতে ধুতে আমরা দু’জন নিশ্চই দু’জনকে বলেছিলাম, ‘চলো শুরু করা যাক জীবনের আনন্দ যাত্রা।‘
সত্যিই এই দীর্ঘ যাত্রাপথে আর যাই হোক, সাময়িক হোঁচট আঘাত বাধা বিঘ্ন পথে এসে দাঁড়ালেও আমাদের জীবনবোধের সহজতায় তারা রাস্তার দুধারে সরে গেছে। আমাদের যাত্রা পথের গতি বা ছন্দের বদল ঘটায় নি।
সন্ধ্যায় আমরা ঠিক করলাম, রেস্ট্যুরেন্টে খাবো। দীপ্তি শাড়ির ওপরে শীতের একটা ঘিয়ে রঙের কোট পরল, আমার তো বিয়েতে পাওয়া স্যুট জোড়া ছিলই। টাই ছিল না। বাঁধতেই পারি না। তাই কেনার কথা মনেও আসেনি। আমরা ৩৬ নম্বরবাস নিয়ে শিয়ালদা, তারপর হেঁটে কলেজস্ট্রীটে এলাম। শুনেছিলাম, সেখানে দিলখুশা কেবিন দারুন ভালো। আগে কখনো আসি নি। ঢুকে পড়লাম। দু প্লেট কষা মাংস আর মোগলাই পরোটা।... সেখান থেকে বেরিয়ে দেখি কুয়াশা চারপাশে। ল্যাম্পপোস্টগুলোকে কুয়াশা যেন জাপটে ধরে স্থির। ল্যাম্পপোস্টের আলোরা মৃদু। হ্যারিসন রোড শুয়ে আছে আলো আঁধারি, প্রলম্ব, শিয়ালদার দিকে। খুব রোম্যান্টিক লাগছিল রাস্তাটা, তার চেয়ে রোম্যান্টিক আমাদের দু’জনের নিশ্চিন্ত পথ চলা। আমরা হাঁটতে থাকি শিয়ালদার দিকে...
৪২ // বর-বৌ //
সত্যি বলতে কি, যখন চন্ডী আর সত্যের বৌদিকে নিয়ে বরের গাড়ি থেকে টোপর মাথায় নামলাম, তখন সারা শরীর মন জুড়ে এমন একটা ভালোলাগা ছড়িয়ে যাচ্ছিল, বিয়ে বাড়ির দিকে তাকাবার সুযোগ হয় নি। বাড়ির পাশেই আর একটা বাড়ির ড্রইংরুমের আসবাব সরিয়ে টরিয়ে বরের বসার ব্যাবস্থা। মেঝেতে লাল তক্তপোষ। দেয়ালে কিছু ফুল। পাড়ার সবাই উঁকি মেরে বর দেখছে। পাশের মাঠে খাবারের প্যান্ডেল, সেদিকে যাবার সময়েও কেউ কেউ দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। মনে পড়ছে না , ওই সময় আমার মনে কী ঘটছিল। তবে অনুমান করছিলাম, কোমরে তরোয়াল গুঁজে আমি ঘোড়া থেকে নেমেছি।
আসলে আমার বয়স তখন তেইশের দোরগোড়ায়। কনে, মানে দীপ্তির বয়স উনিশ। তো বিয়ে করার আনন্দই আমাদের দু’জনকে গিলে বসে আছে। বিয়ের সময় ফোটো তোলা হল, প্রিন্ট এলে দেখা গেল, দীপ্তি তার শোলার মুকুট ঘরে রেখে ফুলের মুকুট পরেই ছাদনা তলা বসেছে, আর সেভাবেই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। দীপ্তি পরে বলছিল, ‘তোমাকে বিয়ে করতে এত ভয় পাচ্ছিলাম, বোধয় সব গুলিয়ে গেছিল তাই।‘ আমার অবশ্য সেসব কিছু মাথাতেই আসেনি। একটাই আনন্দ আমাকে ছেয়ে ছিল, এবার আমরা মুক্ত, আর কাউকে লুকিয়ে চলতে হবে না। ম্যাটিনি শো ভাঙার আগেই বাড়ির ভয়ে দীপ্তিকে ছুট লাগাতে হবে না, পিকনিকে যাবার সময়, ওকে এক গাদা মিথ্যে বাড়িতে বলতে হবে না... আরো আরো কত স্বাধীনতা!
দীপ্তিদের বাড়িতে কি কেউ কেউ অসন্তুষ্ট ছিল সেদিন? এখন মনে পড়ছে না। ছিল নিশ্চই। এমন ছেলের সঙ্গে কোন দাদা ভাই বোন দিদি তাঁদের আদরের বোনটিকে বিয়ে দিতে পারে ঢাকঢোল পিটিয়ে? সত্যি কথা বলতে কি, আমার মত কোন ছেলের সঙ্গে আমি আমার বোনের দিতাম না কোন অবস্থাতেই না। তুলকালাম বাঁধাতাম তবে। সত্যি তো, কে আমি? এমএ ফারস্ট ইয়ার। চাকরি নেই। ট্যুশানিতে ১৩০ টাকা, ব্যাস। এখন ২২ বছর বয়সে আমি একটা ভালো ছেলে, ত্রিশে গিয়ে আমি কী হবো, কে জানে? কিন্তু তবু আমি বিয়ে বাড়িতে কারও কাছ থেকে কোনরকম অপ্রী্তিকর ব্যবহার বা মন্তব্যের সম্মুখীন হইনি। দীপ্তির পরের ভাই, বাবুল একগুঁয়ে, কথাবার্তায় কট্টর, কোন রাখঢাক করে কথা বলতে জানে না। কিন্তু বিয়ের আগে সেই-ই আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে জুতো, স্যান্ডেল, পাঞ্জাবীর, স্যুটের কাপড় কিনে দর্জির কাছে নিয়ে গেছে। ‘আমি কোনদিন স্যুট পরি না (আজও স্বচ্ছন্দ বোধ করিনা) বার বার বলা সত্যেও সে জোর করে নিয়ে গেছে আমাকে। বিয়েতে এসেছিল দীপ্তির মাসতুতো পিসতুতো বোনদের জনা আস্টেক। সেই সংখ্যায় ভাইয়েরাও। মামা মামি পিসি মাসীরা তো ছিলই। আমি কি মনে মনে সেদিন হেসেছিলাম, নাকি গর্বিত ছিলাম? এখন তা বলতে পারব না।
তবে মনে আছে আমার ছোটবোন, ছানু, বাড়ি থেকে পালাবার সময় যে আমাকে ধরে ফেলে, কিন্তু বাধা দেবার মত বয়স তখন তার হয়নি বলেই, আমাকে ধরে রাখার মত কথা জোগাতে পারেনি, সে এসেছিল দিনাজপুর থেকে, তখন কলেজে পড়ত, এখন লন্ডনবাসী, ডাক্তার। সে ছিল আমাদের সঙ্গে। ছাদনা তলায় আমাদের পাশেই বসে ছিল। কী ভাবছিল সে? মনে পড়ে না কিছুই। বিয়ের দিনের কোন ঘটনাই এখন আর মনে নেই। তবে ছাদনা তলার যে ছবি তোলা হয়েছিল, তাতে ছানু বসে আছে পাশে, চোখে মুখে শরীরে ছড়িয়ে আছে একরাশ দুঃখ, আতঙ্ক, হতাশা। সব স্পষ্ট ধরা যায় ওই ছবিতে। সত্যি, বিয়ে করার ছেলেমানুষী উত্তেজনায় আমার চারপাশ যেন কুয়াশায় ঢেকে গিয়েছিল। তাই টের পাই নি কিছুই।
বাসরে জাগা নেই। ঘুম। কলকাতায় খুব ঠান্ডা পড়েছিল সেবার। বিছানা জুড়ে নতুন লেপের গন্ধ ম ম করছে, যেন ছোটবেলায় পুজোয় পাওয়া নতুন জামা কাপড়ের গন্ধ। সে কথা মনে পড়লে আজও হাসি পায়। মানুষ কি উত্তেজনায় ক্লান্ত হয়? ছানুকে আগেই ডেকে নিয়েছিলাম। তিনজনের নাক ডাকতেই ভোর।
সকালে অর্জুন টাকা নিয়ে যখন এলো শয্যাতুলুনিদের ঘোল খাওয়াবার জন্য, বসেই রইল সে। কোথাও কোন সাড়াশব্দ নেই। বরং , দীপ্তির বোনদের কয়েকজন পার্থ’র জন্য মিষ্টি চা নিয়ে এলো, দীপ্তিকে নিয়ে গেল বাইরে। আমাকে বলল, ‘অরুণদা, তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে নিন। খাবার আসছে।‘ অর্জুন থ। পরে জেনেছিলাম, শয্যা তোলানী চাওয়া আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল দীপ্তির মা। আমরা বন্ধুরা সবাই খুব অপমানিত বোধ করেছিলাম এতে। বিয়ে করার একটা বড় মজায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন তিনি।
বাসি বিয়ের আচার অনুষ্ঠানে আমার সব অভিমান অপমান উবে গেল। এখনো ভাবলে শিহরিত হই যখন অগ্নি প্রদক্ষিণ করে আমরা দুজন, প্রথমবার অগ্নির সামনে দাঁড়ালাম। দীপ্তি সামনে, আমি তার শরীরকে আমার শরীর দিয়ে বেষ্টন করলাম পেছন থেকে, সবার সামনে। চারিদিক উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠল। আর সঙ্গে সঙ্গে সারা পৃথিবী যেন ওই মুহূর্তটি দেখে তোলপাড় হয়ে গেল। আহা! কী অপূর্ব সেই সব মন্ত্র! সত্যি কথা বলতে কি, আগের রাতের বিয়ে যেন ছিল পু্রুত-চাষীর ঘা খেতে খেতে আমাদের দু’জনের জোয়াল টানা। আর বাসি বিয়েতে আমি যেন মুহূর্তে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠলাম, পুরুষ হয়ে উঠলাম। আমরা যেন সূর্যকে সাক্ষী রেখে সারা পৃথিবী জয় করে চলেছি। নদ-নদী, পাহাড়, সাগর, মেঘ, নক্ষত্র মন্ডল, ব্রক্ষ্মাণ্ড সবকিছু। দীপ্তি আগে আগে, আমি পিছনে পিছনে। দীপ্তি যেন আমার জীবনের সারথী, আর আমি অর্জুন। এক সময় একটি মন্ত্র বললেন পুরুত ঠাকুর, তাতে আমার সারা শরীরে যেন এক লহমায় বিদ্যুৎ খেলে গেল। আরে! এই কথাই তো কতবার দীপ্তিকে চিঠিতে লিখেছি আমি! আমি সাগর তুমি বেলাভূমি, আমি আকাশ তুমি মেঘ... পুরুতের নির্দেশে পেছন থেকে আমি যখন দীপ্তির নাভিকুণ্ড আঙুলে স্পর্শ করলাম, দীপ্তির শরীর সাপের শরীরের মত ঠান্ডা! আড়চোখে দেখি, দীপ্তির মা তাকিয়ে দেখছেন, দূর থেকে তার বাবা, চারপাশে ভাইবোন... কে আমি কে আমি? আমি যেন গভীর জলতলে আচ্ছন্ন, শয়ান...
দুপুরের ক্লান্তি কাটার আগেই সতুকাকু এলেন। সঙ্গে আমার বন্ধুদের মধ্যে কেউ। শঙ্করদের গাড়ি এস গেল। এবার বিদায়। ডিকিতে তোলা হ’ল বিছানা বালিশ, কয়েকটা বাসন। কাকু বললেন, বাকি জিনিস আগামী কাল ছেলেরা নিয়ে যাবে। কাকু হাত জোর করে, দীপ্তির বাবা আর মাকে নমস্কার করে পরদিন সন্ধ্যায় ‘বাড়ির সবাইকে নিয়ে, আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে বৌভাতের অনুষ্ঠানে আসার জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানালেন। কান্নাকাটি করতে করতে সারতে সারতে দীপ্তি এসে গাড়িতে বসল। চারপাশে পাড়ার মহিলা আর শিশুদের ভীড়। ডাক্তারবাবুর চেম্বারের রুগিনীরাও। আমি গাড়িতে বসতে যাব, এবার গাড়ির ডিকির ঢাকনা বন্ধ হবে, কাকুর চিৎকার, ‘আরে আরে, দাঁড়াও দাঁড়াও!’ শুনলাম, কাকু দীপ্তির মা’কে বলছেন, ‘বেয়ান, মেয়ে তো পাঠাচ্ছেন। রাতে খাবে কী ? রান্না করবে কীসে?’ আমি লজ্জায় মাটিতে মিশে যাই। বন্ধুরা গজরাতে থাকে। অর্জুন না কে যেন একটু জোরেই বলে ফেলে, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী ফংগ্রামীদের নিয়ে এই ঝামেলা। সারা পৃথিবীটাই মনে করে নিজের বাড়ির উঠান।‘ দীপ্তির মা লজ্জায় বাড়ির ভেতর ছুটে যান, মাথার ঘোমটা আর আঁচল সামলাতে সামলাতে। আমি লজ্জায় দীপ্তির পাশে গিয়ে বসি। দীপ্তি কাঁদছে। সে কি লজ্জায়, নাকি ভাই বোন মা বাবাকে ফেলে যাওয়ার দুঃখে, ঠাহর করতে পারি না।
আধ ঘন্টাখানেক লজ্জার সমুদ্রে নাকানিচুবানি খাবার পর দেখি, বাবুল ছুটে আসছে রাস্তা বেয়ে, হাতে লাল টুকটুকে একটা কেরোসিনের উইক স্টোভ। দীপ্তির মা তা নিয়ে কাকুর হাতে দেন। কাকু সেটা হাতে নিয়েই ঝাঁকাতে থাকেন, ‘এটা তো খালি। আপনাদের মেয়ে জামাই কি আজই রেশনের দোকানে লাইন দেবে?’ দীপ্তির মা সাত হাত জিভ দাঁতে কেটে কাকুর কাছ থেকে স্টোভটা ছোঁ মেরে নিয়ে আবার ঘোমটা আর আঁচল সামলাতে সামলাতে ছুটলেন বাড়ির ভেতর। ফিরে এলেন কেরোসিন তেলে টই টম্বুর নতুন স্টোভটা হাত করে।
কাকু সেটা সযত্নে ডিকিতে সাঁটিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললেন, ‘চল বাবলু, এবার চল।‘ জানলা গলে দীপ্তিকে বললেন, ‘চলো মা, শুরু করা যাক নতুন জীবন..
দীপ্তির বাবা জিঁদ ধরলেন, আমাদের বিয়ে দেবেন। ব্যাপারটা অপ্রত্যাশিত নয়, কেননা, আমরা এমন আন্তরিক সুশীল আর সংস্কৃত আচরণ করছিলাম, ব্যাপারটা একদিন ঘটবেই এই প্রত্যয় আমার ছিল, দীপ্তি যদিও নিশ্চিত ছিল না। চমকে দেবার মত ব্যাপার হল, আমার এই অবস্থায় তিনি বিয়ে দিতে চাইছেন। আমার মনে প্রশ্ন, কেন? দীপ্তি তাঁর বাবার অত্যন্ত আদরের মেয়ে। তিন বছর বয়সে মা হারা মেয়েটি বাড়ির সবচে শান্ত, সুস্থির এবং বিচক্ষণ। তার প্রতি বাবার স্নেহ যে বাঁধ ভাঙা হবেই জানা কথা। তাই ধন্দে পড়ে গেলাম। এমএ ফার্স্ট ইয়ার। আয় বলতে ট্যুশানির ১৩০টাকা। থাকি সীতারাম ঘোষ স্ট্রীটের আধ নোংরা মেস বাড়িতে। বাবা মা ভাই বোন তারকাঁটা বেড়ার ওপারে। এমন পাত্রের হাতে আদরের মেয়েকে দিতে চাইছেন কেন তিনি?
রহস্যের কিনারা করতে দীপ্তির বাবার সঙ্গে দেখা করলাম একদিন। ওঁর সোজা সাপটা দুটি কথা—তোমরা খোলামেলা ঘুরে বেড়াচ্ছ, এখন দু’জনেই ইউনিভার্সিটিতে। আমার মেয়ের দুর্নাম হবে, পরে ওর বিয়ে দিতে পারব না। তোমাদের তাই বিয়ে করাই উচিত।
আমজাদীয়ায় পাঁচ বন্ধুর মিটিং বসল। অর্জুন বলল, ‘লোকটা তোকে পরীক্ষা করছেন। বিয়ে দেবার কথা ওঠেই না। একটা ডাক্তারের মেয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বিয়েতে বসবে একটা ভ্যাগাবণ্ডের সঙ্গে? হয় নাকি? ধুস!’ সত্য বলল, তোকে ঘর জামাই করার ধান্দা। দীপ্তির বাবা ঘোর কংগ্রেসী। কী চালে তোকে ফাঁসাবে, কে জানে!
চন্ডী দীপ্তির পুরানো বন্ধু। আমি তো পরে ওদের কলেজে ঢুকেছি। অর্জুন, সত্য আর অভীক অন্য কলেজের ছাত্র। চন্ডী ঘোর প্রতিবাদ করে, ‘দীপ্তির বাবা মোটেই ধান্দাবাজ কংগ্রেসী নয়। যে-মানুষ সাত সাতটি সন্তানের মা’র মৃত্যু ঠেকাতে পারেনি ডাক্তার হয়েও, যাঁকে এই সন্তানদের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে হয়, তার বুকের ব্যথা আর সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা অনেক বেশি গুরুত্বের। অরুণকে তিনি তুড়ি বাজিয়ে উড়িয়ে দিতে পারতেন, দেন নি। কারণ, অরুণকে তাঁর ভালো লেগেছে বলেই।‘ চন্ডী আরো যুক্তি দেয়, ‘ভুলে যাস না। অরুণের সঙ্গে প্রথম দেখার পর বাড়ির সবাইকে তিনি বলেছিলেন, ছেলেটার মধ্যে আগুন আছে।‘ চন্ডীর মোদ্দা কথা, ভদ্রলোক অরুণকে নিয়ে একটা পরীক্ষা নীরিক্ষা, একটা জুয়া খেলতে চান হয়ত। খুব ঝুঁকির এই জুয়া খেলা, তবু। দীপ্তি তিন বছরে মা হারা, তাই দীপ্তির জন্য ওঁর মায়া মমতা, স্নেহ, ভালোবাসা, উৎকন্ঠা সবই বেশি বেশি। উনি কৌশলবাজ নন।‘
শেষে সবাই একমত, ‘সত্যি সত্যিই উনি যদি বিয়ে দিতে চান। আমরা রেডি‘, টেবিল চাপড়ে অর্জুন ফাইন্যাল সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
মাস ছয় সাত হবে, দিনাজপুর থেকে মা কলকাতায় এসেছিলেন। মা’র সঙ্গে দীপ্তির বাবা দেখা করে গেছেন। এরপরই দীপ্তিকে মা দেখেছেন, বলেছেন অনেক কথা, খোলাখুলি। কেননা, বড়দা বারবার মা’কে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘যাও, দেখবে বাবলু বড় ফাট্টাই করে মেয়েটাকে একরাশ মিথ্যে কথাটথা বলে পটিয়েছে, নইলে অমন চালচুলোহীনের সঙ্গে কেউ প্রেমে পড়ে? মেয়েটাকে সব বলবে। সত্যিটা যেন জানতে পারে।‘
মা সেইমত দীপ্তিকে বলেছেন সব, খোলাখুলি। বলেছেন, ছেলে আমার বাউন্ডুলে। জেলখেটেছে রাজনীতি করে, কলেজের ফার্স্ট ইয়ারেই। আইএসসি পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আমার টাকার কৌটো থেকে টাকা চুরি করে লুকিয়ে এপারে এসেছে। অরুণের সঙ্গে আমাদের সংসারের কোন যোগাযোগ নেই। ওর বাবা রাজনীতির কারণে এখনো জেলে, ওকে এক অর্থে ত্যজ্য করেছেন। ওকে কেউ টাকা পয়সা দেয় না। নিজেই কি করে চালায়, জানি না। আমাদের কোন জমিদারি নেই। আমরা মধ্যবিত্ত। স্বাধীনতার লড়াই করেছে আমাদের পরিবার, এখনো রাজনীতিতে জড়িয়ে আছি আমরা সবাই। আমাদের কোন জমা টাকা নেই। দীপ্তি সব শুনে এক নাগাড়ে শুধু বলে গেছে, ‘জানি,আমি সব জানি। অরুণ আমাকে সব বলেছে।‘ সব শুনে মা অবাকই হয়েছেন, হয়ত, দীপ্তির মাথায় হাত রেখে সস্নেহে জিজ্ঞেস করেছেন শুধু, ‘তবু?’
একদিন আমি আর দীপ্তি চাঁদনি চকের আমজাদীয়ায় গিয়ে বসি। দীপ্তি বলে, ‘আমার ভয় করছে। তোমার ওইটুকু ইনকাম। আমরা সামলাতে পারব তো? আমি তখন কোম্পানী বাগানে সেনকো জুয়েলারির মালিক, প্রভাত সেনের বাড়িতে তাঁর দুই পুত্রকন্যাকে পড়াই। শঙ্কর (এখন সেনকো গোল্ড এন্ড ডায়মন্ড’র মালিক) আর তার বছর দুয়েকের বড় দিদি, পার্বতী। শঙ্কর ক্লাশ ফাইভ, পার্বতী ক্লাশ সেভেন। মাইনে ১৩০টাকা মাসে। আমার একমাত্র আয়। দীপ্তিকে বলি, ‘আমার মত ক’জন এই সময়ে ১৩০ টাকা মাসে মাসে আয় করে, বলো? তবু এরচেয়েও অনেক কম টাকায় কাউকে না কাউকে বইতে হয় অবিবাহিত বোন, বিধবা মা, বেকার ভাইয়ের মত আরো অনেকের দায়দায়িত্ব। এবং তারা তা পারেও। হয়ত পাকা বাড়িতে না, বস্তীতে থাকতে হয় তাদের। তবু পারে। তাহ’লে তুমি -আমি পারব না কেন? মনে করব, তুমিই আমার অবিবাহিত বোন, আমার বিধবা মা তুমি, তুমিই আমার বেকার ভাই। আমরাও পারব। কিছুদিন হয়ত বস্তার পর্দা ঘেরা বস্তী ঘরে কুপি জ্বালিয়ে তোমাকে আমার ছেঁড়া জামা সেলাই করতে হবে, হয়ত তোমার পাশে বসে উবু হয়ে কুপির আ্লোয় লিখে যেতে হবে আমাকে। তবু আমরা পারব। শুরু মানে তো থেমে থাকা নয়। থেমে থাকা মানে তো শেষ নয়? তবে? পারব না আমরা?’
হঠাৎ দীপ্তির চোখ ঝলসে ওঠে, বলে, ‘অবশ্যই পারব। খুব পারব’
###
বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেল। ৪ ডিসেম্বর। ১৯৬৮। বুধবার। অর্জুন সব দায়িত্ব নিল, সঙ্গে চন্ডী আর সত্য। আমাকে ওরা বলল, ‘তুই বিয়ে করতে যা যা করার, সে সবের ব্যবস্থা কর। আমরা বৌভাতের অনুষ্ঠান সামলাব।‘ এর একটা কারণ ছিল। মা আমাকে ১০০০ টাকা পাঠিয়েছেন, বিয়ের খরচের জন্য। অর্জুন দীপ্তির বাবার সঙ্গে ফাইন্যাল আলোচনা করতে গিয়েছিল, জেনে এসেছে, ৯০ জন কন্যাযাত্রী আসবে বৌভাতের অনুষ্ঠানে। বন্ধুদের কাছে দীপ্তির একটাই প্রার্থনা, বৌভাতের অনুষ্ঠানে যেন জাঁকজমক থাকে। নানা জায়গা থেকে আত্মীয় স্বজনরা আসবে। তাদের সামনে যেন মাথা হেঁট না-হয়। দীপ্তিকে আশ্বস্ত করেছে তিন মূর্তি, ‘জাঁকজমক হবে। তাছাড়া, তোমার বাবা বিয়েতে যত আইটেম খাওয়াবেন, আমাদের তা থেকে অনেক বেশি আইটেম হবে।‘ দীপ্তি আমাদের চারজনকেই ভরসা করে, ভালওবাসে (আজও, গত ৫০ বছর ধরেই)। তাই নিশ্চিত হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
আমরা দু’জন একদিন বৌবাজারের এক অনামী দোকান থেকে সোনালী রঙের ঝলমলে একটা টাসেল আর তাতে ঝোলাবার জন্য একটা সোনার লকেট কিনলাম। সোনার ভরি সেদিন ২৬০টাকা। আর একদিন কলেজ স্ট্রীট থেকে ধুতি পাঞ্জাবী, কলাবাগান বস্তী থেকে বাটার সিল মোহর লাগানো চামড়ার স্যান্ডেল কেনা হল। মা দীপ্তির জন্য একটা বেনারসী পাঠিয়েছিলেন। অর্জুনের সঙ্গে গিয়ে একদিন ওদের পাড়ার কাছেই, কাদাপাড়ায়, নারকেলডাঙা মেইন রোদের এক গলিতে, এক বাড়িউলি পিসিমার দোতলায় একটা ঘর ভাড়ায় নিলাম। এক চিলতে রান্নাঘর নিচে। খাটা পায়খানা, উঠনের চাতাল থেকে দূরে। ভাড়া ৬৫ টাকা, আলোর জন্য আলাদা ১৪টাকা। একমাসে ভাড়া জমা করে বিয়ের কয়েকদিন আগে একটা বালতি উনুন আর এক মণ কয়লা রান্নাঘরের পাশে ডাঁই করে রাখলাম। আমি এবং আমরা রেডি।
বিয়ের দিন সকালে, সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের মেসবাড়ি থেকে ভাড়াবাড়িতে উঠে এলাম। সঙ্গে একটা ছোট্ট শতরঞ্চি আর একটা চা-চামচ। বাকি সামগ্রী মেসের বলাইদাকে দিয়ে এলাম। ‘বোউমাকে একবার দেকিয়ে নে গপ, দাদাবাবু!’ বলাই ছিল, দুপুরে অভীকদের বাড়ি খাব। চলে গেলাম।
মাসীমা সব কিছুই জানতেন। যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আমাদের কী উপহার দেবেন?’ বলেছিলেন, দীপ্তিকে একটা আংটি দেব।‘ ‘আংটি দিতে হবে না, তার টাকাটা দিন বরং।‘ মাসীমা আমাকে আড়াইশ’ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি দুই মাসীমার কাছ থেকেও কাইন্ডের বদলে ক্যাশ নিয়ে আমার বিয়ের খরচ ম্যানেজ করেছিলাম।
অভীকদের বাড়ি পৌঁছে মাসীমার কাছ থেকে এক তালু গুঁড়ো হলুদ নিয়ে গায়ে মেখে বাথরুমে নিজেকে সোনা রঙে স্নান করালাম। তারপর খেয়েদেয়ে, কাছেই কফি হাউস। যাদের সঙ্গে দেখা হল, সবাইকে বললাম, আজ আমার বিয়ে। কেউ অবাক, কেউ বা কাঁধে চাপ দিয়ে বলল, শাবাস! অর্জুনের নির্দেশ ছিল, কলেজ বা ইউনিভার্সিটির একজনও যেন বৌভাতে আমন্ত্রিত না-হয়। তাই সবাইকে বললাম, ‘তোরা বিয়ের পরে আসিস, একসঙ্গে বসে চা খাব। একথাটা আমি ইউনিভার্সিটির ক্লাশেও বলেছিলাম সবাইকে। ‘খবরটা জানালাম তোমাদের, কিন্তু কেউ বিয়েতে আসবি না।, পরে চা খেয়ে যাবি।‘
পাঁচটা নাগাদ নতুন বাড়িতে এলাম। কিছুক্ষণ পরে এলো সত্য, সঙ্গে, তার বৌদি । আমাকে চন্দনের তিলক পরিয়ে সাজালেন। নতুন ধুতি পাঞ্জাবী আর স্যান্দেল গলিয়ে নিয়ে এলাম। ট্যুশানী বাড়ির সেনকো জুয়েলারীর মালিক, প্রভাত সেন পাঠিয়ে দিলেন তাঁদের ফিয়েট গাড়িটি। চণ্ডী এলো, রজনীগন্ধার মালার হাল্কা জাল দিয়ে গাড়ি সাজালো। নিদবর? চন্ডী পাশে এসে বসল।
------------------------